বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, ০৩ এপ্রিল ২০১৭
ভোলার মনপুরার উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকার রবিশস্য। এতে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
এতে একদিকে যেমন তাদের বরিশস্য আবাদে আগ্রহ হারিয়ে গেছে অন্যদিকে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যাওয়া ঋণের দায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। অদিনের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির পর নতুন করে মনপুরার উপজেলার হাজির হাট, মনপুরা এবং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের হাজারও কৃষক এ মৌসুমে মুগ, ফেলন, মরিচ, চিনাবাদাম, তিল ও সয়াবিনসহ বিভিন্ন রবিশস্যের আবাদ করেছিলেন।
এ ফসল আবাদ করতে গিয়ে তাদের এনজিও ও ব্যাংক থেকে মোটা অংঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে। কিন্তু বাঁধ না থাকায় গত চারদিনের চার দফা অতি জোয়ারের পানিতে এসব ফসল তলিয়ে গেছে। লবণাক্ত পাণিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির রবিশস্য। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। সোনার চর এলাকার কৃষক মো: জাফর জানান, কৃষি ব্যাংক থেকে ২০হাজর টাকা লোন নিয়ে তিনি মুগ ডাল ল করেছেন কিন্তু জোয়ারের পানিতে সব তলিয়ে গেছে। ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার নসু মিয়া জানান, ২ কড়া জমিতে মরিচ ও মুগ ডল করেছে, পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। একই কথা জানান, খোকন। তিনি বলেন, ধারদেনা করে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ফসলের আবাদ করলেও পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
কাউয়ার টেক এলাকার বাবর আলী বলেন, জোয়ারের পানিতে ডাল, মরিচ ও চিনা বাদাম ভেসে গেছে, একই কথা আরেক কৃষক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগের বৃষ্টি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, মনে করেছি এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব কিন্তু জোয়ারের পানিতে সব শেষ। কৃষকরা জানালেন, অতি জোয়ারের ১০ গ্রামের কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে, যারা ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন তাদের মধ্যে অনেকেই এখন দিশেহারা।
তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কোন অবস্থাই খুঁজে পাচ্ছেন না। সরেজমিন গিয়ে গেছ গেছে, বিস্তীর্ন ফসলের ক্ষেতে যখন কৃষকরা ফসল তোলার কথা ভাবছিলেন ঠিক তক্ষুনি এমন বিপর্যয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। বিকল্প ব্যবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর নেই কোন উপায়। তাই চোখ-মুখে তাদের আতঙ্কের ছাপ। ফসলে দিকে চেয়ে আছেন কৃষকরা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিল, মুগ ডাল, ফেলন, চিনা বাদামের। উপেজলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা, উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে ১০ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে রবিশস্যে আবার হয়েছে।
এরমধ্যে মুগ ডাল ৯ হাজার ৫’শ হেক্টর, ফেলন ১২০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ১৫০ হেক্টর, মরিচ ৬০০ হেক্টর, বাদাম ১৬০ হেক্টর, সয়াবিন ৫ হেক্টর তিল ৬ হেক্টর এবং সবজি ৩২০ হেক্টর। এরমধ্যে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৩৫০ হেক্টর জমির মুগ, ২৫ হেক্টর জমির ফেলন, ১৮০ হেক্টর জমির মরিচ, ৩৫ হেক্টর চীনা বাদাম, ৬ হেক্টর তিল, ৫ হেক্টর সয়াবিন এবং ৫০ হেক্টর জমির সবজি। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১৬ ৮০ হেক্টর। যা টাকার অঙ্কে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজা টাকা বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার গুপিনাথ দাস বলেন, বিপর্যয় কাটাতে কৃষকদের রবি মৌসুমে চাষাবাদ বন্ধ দিয়ে আউশ মৌসুমে চাষাবাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, এতে করে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাওসার আলম বলেন, মনপুরা উপজেলায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার বাধের কাজের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি।