ভোলা : মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে শহররক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহররক্ষা বাঁধ। এদিকে, মেঘনার ভাঙন থেকে ভোলাকে রক্ষায় সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিইও ব্যাগ ফেলে জাম্পিংয়ের কাজ শুরু হলেও তা ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মূল ঠিকাদার সরেজমিনে এসে কাজ না করে সাব ঠিকাদার দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করাচ্ছেন। এ ছাড়া ঠিকাদার টাকার জন্য এ কাজে পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ না করে সামান্য শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কারণে কাজ এগোচ্ছে না বলেও জানান স্থানীয়রা। ফলে নদীভাঙন রোধে সরকারের এ কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। একদিকে চলছে নদী ভাঙন, অন্যদিকে নদীর তীরে চলছে নদীভাঙন রোধে জিইও ব্যাগ ফেলার কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাত করে বিস্তীর্ণ জনপদ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
গত এক মাসে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা অবিলম্বে নদীভাঙন রোধে মেঘনার পাড়ে সিসি ব্লক স্থাপন ও নদীতে ড্রেজিংসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
এদিকে, ঠিকাদারদের কাজে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে এসে কাজ তদারকি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ও টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা ঠিকাদারদের কাজের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছেন। তাই তারা কাজের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ভোলায় কয়েকদিন ধরে অবস্থান করেও ঠিকাদারদের কাজের গতি বাড়াতে পারছেন না।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনার তীরে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীব্র স্রোত। বড় বড় ঢেউ। এরই মধ্যে মেঘনার তীরে ভাঙন রোধে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তারা ২-৩টি পন্টুনে করে নদীতে জিইও ব্যাগ ফেলার কাজ করছেন। তবে, কাজের মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদকে দেখা যায়নি।
ঠিকাদারের পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে রাজিব আহাম্মেদকে ওই কাজ তদারকি করতে দেখা গেছে। রাজিব আহাম্মেদ দাবি করে বলেন, ‘মূল ঠিকাদারও মাঝে মাঝে ভোলায় আসেন। পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী জহিরউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার এবং টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কাজী তোফায়েল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে ঠিকাদারের সেই কাজ তদারকি করছেন।’
স্থানীয়রা জানায়, নদীভাঙন চলছেই। নদীর ভাঙন কমছে না। প্রায় প্রতিদিনই মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। অব্যাহত নদী ভাঙনে ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নের বহু মানুষের ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি এবং গরু-ছাগল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়াবহ ভাঙনের ফলে ইলিশা-রাজাপুর ইউনিয়নের ভোলা শহররক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
নদী তীরবর্তী ইউনিয়ন ইলিশার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী জূলফিকার বলেন, ‘মেঘনা নদীর ভাঙনে প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ নল (১০০) হাত করে জনপদ বিলীন হচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।’
ইলিশা ইউনিয়নের চর আনন্দ পার্ট ৩ গ্রামের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘গত এক মাসে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে ভোলার মানচিত্র।’
স্থানীয় চায়ের দোকানি খালেক দালাল অভিযোগ করে বলেন, ‘ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করছেন না। ঠিকমতো কাজ করলে এতদিনে কাজ শেষ হয়ে যেত। ভোলা নদীভাঙন রোধও হয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘মূল ঠিকাদার এলাকায় না এসে তার প্রতিনিধিকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। সেই প্রতিনিধি ঠিকমতো শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করছেন। ফলে ধীরগতিতে চলছে নদীভাঙন রোধের কাজ।’
খালেক দালাল আরো বলেন, ‘আজ পাউবোর বড় কর্মকর্তা ও টাস্কফোর্সের কাজী তোফায়েল স্যাররা আসলে কিছু কাজ হয়। তারা চলে গেলে আবার কাজ থেমে যায়। ঠিকাদার মনে চাইলে কাজ করেন, মনে চাইলে করেন না। কোনোদিন দুপুর ১২টার দিকেও এসে কাজ করছেন। ঠিকাদার তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
প্রায় একই অভিযোগ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদার শ্রমিকদেরকে ঠিকমতো টাকা-পয়সা দেন না বলেই শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করছেন না।’
এ ব্যাপারে জানতে মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারের প্রতিনিধি রাজিব আহম্মেদ বলেন, ‘গত ১৭ মে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনার তীরে বালু ফেলে জাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। আর মাত্র ৩১ হাজার বস্তা বালু ফেলার কাজ বাকি রয়েছে। আগামী ছয় দিনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে, বালুর বস্তা ফেলে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।’
টাইমস স্পেশাল, ভোলা, স্পটলাইট