ভোলা ঢাকা নৌরুটে লঞ্চ রোটেশন প্রথা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিমউদ্দিনকে এ নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
সকালে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দ্রুত ভোলা-ঢাকা নৌরুটে রোটশন প্রথা বাতিল করে জনগণের সুবিধার্থে লঞ্চ চালানোর জন্য আমি শুক্রবার জেলা প্রশাসককে বলেছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ভোলাবাসীর জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের সুবিধার্থে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে রোটেশন প্রথা বাতিল করে নিয়মিত লঞ্চ চালানোর জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে রোটেশন প্রথা বাতিল করে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেব।
ভোলা-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচলের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে এ রুটে দ্রুত রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবিতে লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। তারা এ দাবিতে সোচ্ছার হয়ে ওঠে। এমনকি এ দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনেরও ঘোষণা করা হয়েছে।
একই দাবিতে গত ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
কালের কণ্ঠ’র পাঠক ফোরাম শুভসংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন এ কর্মসূচি আহ্বান করেছে। এরপরও রোটেশন প্রথা বাতিল করা না হলে আগামীতে হরতালসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন আয়োজকরা।
এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠন ভোলা লঞ্চযাত্রী কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ও শুসসংঘের ভোলা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আদিল হোসেন তপু সাংবাদিকদের জানান, ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন আটটি করে লঞ্চ চলাচলের সরকারি নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে এ রুটে যাত্রীদের জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচল করছে।
এতে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে লঞ্চের কেবিনের সংকট দেখানো হচ্ছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সময়মতো লঞ্চের কেবিন পাচ্ছেন না।
অপরদিকে, একজনের কেবিন অন্যজনকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। তাই বাধ্য হয়ে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীদের জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচলের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে এ রুটে রোটেশন প্রথা বাতিল দাবিতে আমরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করেছি।
এরপরও রোটেশন প্রথা বাতিল করা না হলে আগামীতে হরতালসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
এদিকে, ভোলা-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীদের জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচলের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে এ রুটে রোটেশন প্রথা বাতিল দাবিতে এ রুটে চলাচলকারী সাত যাত্রীবাহী লঞ্চের চার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারা হলেন কর্নফুলী ৯, কর্নফুলী ১০, কর্নফুলী ১১ লঞ্চের মালিক মো. সালাউদ্দিন, এমভি বালিয়া লঞ্চের মালিক মো. লিটন, এমভি ভোলা ও ক্রিস্টাল ক্রুজ লঞ্চের মালিক গোলাম নবী আলমগীর এবং গ্লোরী অব শ্রীনগর লঞ্চের মালিক আব্দুল জলিল।
গত ২১ নভেম্বর লঞ্চযাত্রী ও বিশিষ্ট ঠিকাদার ভোলা পৌরসভার মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা রুহুল আমিন কুট্টি বাদী হয়ে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেন।
বাদী রুহুল আমিন কুট্টি ও বাদী পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলী (এপিপি) অ্যাডভোকেট কিরন তালুকদার জানান- ভোলা-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চের রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো আমলে নেননি প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকরা।
সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে রোটেশনের মাধ্যমে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চ চালাচ্ছে প্রভাবশালী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের পক্ষে লঞ্চযাত্রী ও বিশিষ্ট ঠিকাদার রুহুল আমিন কুট্টি বাদী হয়ে জাস্টিস অব দ্যা পিস ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারায় ভোলা-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী সাত যাত্রীবাহী লঞ্চের চার মালিকের বিরুদ্ধে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালতে তলব করে কারণ দর্শানো নোটিশ জারির আদেশ দেন। তারা জানান, ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন চারটি করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করার নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন দুইটি করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালাচ্ছে।
এ ছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকাও আদায় করা হয়। এমনকি সাধারণ যাত্রীরা কেবিনের বুকিং দিলেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ অনেক সময়ে সেই কেবিন অন্যজনকে দিয়ে দেন বলেও জানানো হয়।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলী (এপিপি) সোয়েব হোসেন মামুনসহ প্রায় সাত আইনজীবী বাদীর পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং মামলা পরিচালনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে ভোলা লঞ্চ মালিক ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের মোবাইল নাম্বারে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।’
শিরোনামভোলা