বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: বসতঘরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে মাদক উদ্ধারের সাজানো নাটক করে ছেলেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধা মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বাড়ি মজলিশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী এবং ওই বৃদ্ধার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়ি মজলিশ গ্রামের সজিব মিয়ার বাড়িতে গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান চালায় সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও পুলিশের কথিত তিন জন সোর্স পিয়াল হোসেন, সজিব হাসান ও আনোয়ার হোসেন। পুলিশ সদস্যরা সজিব মিয়ার বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সঙ্গে থাকা সোর্সদের প্রথমে সজিব মিয়ার ঘরে প্রবেশের নির্দেশ দেয়। এ সময় সোর্সরা সজিব মিয়াকে মাদক দিয়ে ফাঁসানের জন্য তার ঘুমিয়ে থাকা ৭ বছরের শিশুকন্যা নোহা আক্তারের বালিশের নিচে ৫০ পিস ইয়াবা গোপনে রেখে আসে। তারপর পুলিশ সদস্যদের ঘর তল্লাসি করার জন্য নিয়ে আসে।
পরে পুলিশ সজিব মিয়ার মেয়ে নোহা আক্তারের শোয়ার বালিশের নিচ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে সজিব মিয়াকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটক করে থানায় নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় তার বৃদ্ধা মা জোসনা বেগম তার ছেলেকে অন্যায়ভাবে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় প্রতিবাদ করে পুলিশ সদস্যদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সজিব মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে জোসনা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পুলিশের সামনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চিকিৎসক খবর দেওয়া হলে তারা এসে জোসনা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ সজিব মিয়াকে ছেড়ে দিয়ে থানায় ফিরে যায়।
সজিব মিয়া সাংবাদিকদের জানান, তিন বছর আগে আমি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। পরে মায়ের নির্দেশে ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমি এ ব্যবসা থেকে সরে এসে সৎভাবে জীবনযাপন করছি। মোটা অংকের টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের সোর্সদের ব্যবহার করে আমার কাছ থেকে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে আটক করে নিয়ে যাচ্ছিল। এ ঘটনা সহ্য করতে না পেরে এবং পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়ার কারণে আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। এর ৮ মাস আগে সোনারগাঁ থানা পুলিশের এক উপ পরিদর্শক আমাকে ক্রস ফায়ার ও গুম করার ভয় দেখিয়ে দুইলাখ টাকা নিয়ে দুইদিন পর আমাকে ছেড়ে দেয়।
সোনারগাঁ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান মাদক দিয়ে সজিব মিয়াকে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সে পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার ঘরে অভিযান চালিয়ে ৫০ পিস ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক করা হয়েছিল। তার মায়ের মৃত্যুর পর মানবিক কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছি। সেখানে পুলিশের কোনো অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কোনো সোর্স অনিয়ম করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) খোরশেদ আলম জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বৃদ্ধ নারীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঘটনার সময় ওই নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। পুরো বিষয়টি আমরা আরো ব্যাপক তদন্ত করছি।
দেশের খবর