‘মাদক ব্যবসায়ী’ অপবাদ দেওয়ায় পুলিশের সামনে গৃহবধূর বিষপান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় পুলিশের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ অপবাদ দিয়ে টানা-হেঁচড়া করার অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্য এই অপমান সইতে না পেরে পুলিশের সামনেই বিষপান করেছেন ওই গৃহবধূ। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে। অন্যদিকে ঘটনাটি ক্ষতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাখায়াত হোসেন।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আখাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক আলী ও সহকারী উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে নারী পুলিশ সদস্যসহ একদল পুলিশ আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নে ওই গৃহবধূর বাড়িতে যায়।
এরপর ওই গৃহবধূকে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পুলিশ। এ সময় তাকে ধরার জন্য টানা-হেঁচড়া করেন তারা। স্বজনদের দাবি, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা কোনো অভিযোগ না থাকলেও তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে পুলিশ।
এলাকাবাসীর সামনে এমন অপমান সইতে না পেরে ক্ষোভে পুলিশের সামনেই বিষপান করেন ওই গৃহবধূ। সবার সামনে বিষপান করলেও কেউই তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। উল্টো পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন।
এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই গৃহবধূকে প্রথমে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হয়। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গৃহবধূর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ধরার জন্য দুই সিএনজিতে করে নারী পুলিশসহ অনেক পুলিশ আসে। এসময় তারা তাকে আটকের জন্য টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সামনেই বিষ খায় আমার মেয়ে। কিন্তু পুলিশ তাকে আটকায়নি। বিষ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘর থেকে বের হয়ে যায়।’
ওই মা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের নামে কোনো মামলা বা কোনো ওয়ারেন্ট নেই। শুধু শুধুই তারা এই কাজ করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
গৃহবধুর দেবর বলেন, ‘আজ সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করেই একদল পুলিশ বাড়িতে এসে ভাবীকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমার ভাবী বলে যে, তার নামে কোনো মামলা নেই। কেন থানায় যাবে?
দেবর আরও বলেন, ‘এ কথার পর পুলিশ সদস্যরা ঘরের সব জিনিসপত্র উলটপালট শুরু করে দেয়। তারা ভাবীকে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা টানাটানি করে। এক পর্যায়ে ভাবী বিষ খায়। এরপরই পুলিশ দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভাবী নামে কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই।’
ওই গৃহবধূকে ঢাকা নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা আখাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল সালেক জানান, ‘ওই গৃহবধূ মাদকাসক্ত এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিষ খেয়েছেন। থানার ওসি আমাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাই তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবদুল মোনেম বলেন, ‘রোগীকে আখাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওয়াশ করে এখানে পাঠানো হয়। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্যে রাজধানী ঢাকায় রেফার্ড করেছি। তবে রোগীর অবস্থা ভাল নয়।’
ঘটনা সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. সাখায়াত হোসেন জানান, ‘আখাউড়া থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ওই গাঁজাগুলো ওই গৃহবধূ ও তার স্বামীর বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তারপর সেখানে কি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই গৃহবধূর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে যা ২০১৮ সালে রুজু করা হয়। ঘটনার পর আজ আরও একটি মাদক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।’
দেশের খবর