একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় স্থগিত রয়েছে বরগুনার ৩৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে তিনটি তদন্ত কমিটিও। এমনকি প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতারের পর বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সরোয়ার ননীর বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে হাজারও শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বিশেষ করে প্রাথমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকলে একসময় মেধাশূন্য হয়ে পড়বে জাতির ভবিষ্যৎ এমটাই মন্তব্য তাদের।
এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- গত ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বরগুনার জেলা প্রশাসন পরিচালিত ‘সিটিজেনস ভয়েস বরগুনা’ নামের ফেসবুক গ্রুপে বরগুনা সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর পায় জেলা প্রশাসন। পরে এ খবরের সত্যতা পাওয়ায় স্থগিত করা হয় বরগুনা সদর উপজেলার ২৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা।
সেই রেষ কাটতে না কাটতেই পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর আবারও ফাঁস হয় বরগুনা সদর উপজেলার প্রথম শ্রেণির মৌখিক পরীক্ষার পরিবেশ পরিচিতি এবং চতুর্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতির প্রশ্নপত্র। এতে আবারও স্থগিত হয় বরগুনা সদর উপজেলার ২৫৫টি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা।
সবশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ধূসর স্বপ্ন নামের একটি আইডি থেকে বেতাগী উপজেলার দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হয়। পরে ফেসবুক পোস্টে দেয়া ওই প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল থাকায় স্থগিত করা হয় বেতাগী উপজেলার ১৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরের দিনের পরীক্ষা।
বারবার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় উদ্বিগ্ন এক অভিভাবক সালমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৩ ডিসেম্বর চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষার ছিল। এর আগের দিন ওই পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রশ্ন ফাঁস এবং পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি আমর জানা ছিল না। আমার ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষার হলে এসে জানতে পারি পরীক্ষা স্থগিতের কথা।
পরীক্ষা না হওয়ায় আমার ছেলের মধ্যে পড়াশুনার প্রতি একাগ্রতা অনেকটা কমে গেছে। বারবার জানতে চাচ্ছে মা প্রশ্ন ফাঁস কী? কিভাবে এটা করে?।’ প্রশ্ন ফাঁসের কারণে পরপর দু’টি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় লেখা পড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান তিনি।
শাহনা বেগম নামের আরেক অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু কিছু প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর কিন্তু অজানা থেকে যায়। এ কারণে অনেক ছেলে-মেয়ে ক্লাসে তেমন ভালো করতে না পারলেও, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করছে। এজন্য আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বরগুনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আলহাজ্ব আবদুর রব ফকির সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়ার একটি চক্রান্ত রয়েছে।
প্রাথমিকরে প্রশ্ন ফাঁস করা একটি নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত অপরাধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষত করার জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে খুঁজে বের করে এমন শাস্তি দেয়া উচিৎ, যাতে অন্যরা প্রশ্নফাঁস করার সাহস হারিয়ে ফেলে।
বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) আবদুল মজিদ বরিশালটাইমসকে জানান, যেসব বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেই সব বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার জন্য পূনরায় তারিক নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্টেকটরের সমন্বয়ে দু’সদস্য বিশিষ্ট দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের সাপেক্ষে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বরগুনার আয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সরোয়ার ননীর বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ মামলায় ননীকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে বরগুনা সদর উপজেলার চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্নের সিলগালা করা প্যাকেটটি খোলা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বরিশালটাইমসকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’’
শিরোনামবরগুনা