ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুরে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক আব্দুস সালাম হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ২জনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে রাজাপুরের সাতুরিয়া এলাকা থেকে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ওই এলাকার দিন মজুর মো. ফারুক হোসেন ও মো. বাদশা মিয়া। সকালে ফারুক ও বাদশাকে সাতুরিয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তাদের এই হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের দুপুরে ঝালকাঠি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা দু’জনেই দিনমজুর এবং ওই হত্যার দিন তারা এলাকায় ছিলেন না বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন।
এ দিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচারের দাবীতে উত্তাল পিরোজপুর। তারা আসামি গ্রেফতার না হলে আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজাপুর থানার এসআই আবুল কালাম জানান, অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার সন্দেহেভাজন দুই আসামীকে গ্রেফতার করে শনিবার বিকেলে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঝালকাঠি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে অজ্ঞাত একটি নম্বর (০১৭১১১১৮৫৮৪) দিয়ে) কোথায় বসে সংবাদ করা হয়েছে সেটা জানতে চান। এরপরে ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখে।’ অপর দিকে আসামীরা যুবলীগের নেতা হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বাদী ও সাক্ষীদের পরিবারের সস্যরা। মামলার ১ নং স্বাক্ষী নারী শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তার মুক্তা মামলার পর থেকেই আসামীদের হুমকীতে এলাকা ছাড়া হয়েছে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, তার মাকে ফোন দিচ্ছে আসামি ও তাদের সহযোগীরা। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ঠান্ডু তাকে এ ঘটনায় সাক্ষী দিলে তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণে মেরে ফেলবেন বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আসামীরা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। এলাকায় তারা মুর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। দিনে দুপুরে মানুষ মেরে ফেলতে পারে বলে কান্নায় ভেঙে পরেন ওই শিক্ষিকা। এর পর থেকে শিক্ষিকার মাসহ পরিবারের সদস্যরাও আত্মগোপনে রয়েছে।’
তিনি জীবনের নিরাপত্তার জন্যই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষিকা মুক্তা শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মুঠো ফোনে এ প্রতিনিধিকে একটি এসএমএস করে তাদের পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান।
তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার পরিবারের নিরাপত্তার আবেদন জানান। এসএমএস’এ লেখা ছিল‘ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যদি আমার নিরাপত্তা না পাই, আমার পরিবারের যদি নিরাপত্তা না পাই, তাহলে আমি নিজে আত্মহত্যা করে প্রমান করব সত্যি কথার কোন বিচার নেই। দেশে নিরাপরাধ মানুষের জন্য কোন আইন নেই। সরকার আমারদের পাশে নেই (মুক্ত)। এর পর থেকেই তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক ছালাম খানের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আব্দুর রহমান খান কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করত রাজাপুরের আমতলি গ্রামের মরিয়ম আক্তার মুক্তা। বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে ওই মুক্তিযোদ্ধা রাজাপুরের আমতলা এলাকায় শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তার মুক্তার গ্রামের বাড়িতে যান।’
এসময় জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ সদস্য বাচ্চু হাওলাদার ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ আলমসহ শাহ আলমের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ করে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করে।’ আহত অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। নিহত আব্দুস ছালাম খান পাশ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার শিয়ালকাঠি এলাকার বাসিন্দা ও একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।’
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শামসুল আলম মুরাদ বাদী হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাতুরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য বাচ্চু হাওলাদার ও ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ আলমসহ নামধারী ৮ জনসহ আরও ২ থেকে ৩ জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রাজাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।’ এ ব্যপারে ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষিকা ওসির কাছে জানিয়েছে কিনা। তিনি খোজ নিয়ে দেখছেন।’
খবর বিজ্ঞপ্তি, ঝালকাঠির খবর