১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা: নাম তুলতে পৌনে ৪ লাখ টাকা নিলেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৫৬ অপরাহ্ণ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা: নাম তুলতে পৌনে ৪ লাখ টাকা নিলেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে এক ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর তদবিরের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহানের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা প্রকাশ করায় ভুক্তভোগী পরিবারকে নানা হুমকি ধামকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

সালেহা জাহান মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তিনি সিংগাইর উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকও। সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী গীতা সরকার বলেন, বাবা গৌর চন্দ্র সরকার একজন বেহালা বাদক। বাংলাদেশ বেতারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নিলেও তালিকায় নাম ওঠেনি। এ নিয়ে বাবার আক্ষেপ আছে। তাই সন্তান হিসেবে বাবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি তালিকায় নাম তুলতে।

কিন্তু সবার মুখেই শুনেছি টাকা ছাড়া কিছুই হবে না। যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহা জাহান আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে বিষয়টি জানালে এক মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠাতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এজন্য আমার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। দুদফায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন সালেহা জানান। বাকি টাকা কাজের পর দেওয়ার মৌখিক চুক্তি হয়।

গীতা সরকার আরও বলেন, আমার টিউশনি, বোনের কাছ থেকে ধার করা এবং এনজিও থেকে ঋণ তুলে সালেহাকে টাকা দিয়েছি। ব্যক্তিগত হিসাব নম্বর থেকে সালেহার ব্যাংক হিসাব নম্বরে আরটিজিএসের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছি।

নগদ দিয়েছি ২০ হাজার টাকা। ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফারের রশিদও আছে। কিন্তু দুবছর পেরিয়ে গেলেও সালেহা জাহান বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করতে পারেননি। এ কারণে তার কাছে টাকা ফেরত চাই। বহুদিন ঘুরানোর পর কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু বাকি টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাদের চাপে রেখেছেন তিনি।

গীতা সরকারের এক আত্মীয় বেসরকারি একটি টেলিভিশনে ঢাকায় কর্মরত এক সাংবাদিক সম্প্রতি টাকা চেয়ে যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহা জাহানকে ফোন করেন। এ সময় সালেহা জাহানকে বলতে শোনা যায় টাকা তো ফেরত দেওয়া হয়েছে। ওই সাংবাদিককে বলতে শোনা যায় আপনি তো ২ লাখ টাকা দিয়েছেন।

আরও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আছে। তখন সালেহা জাহান বলেন, ওটাও ফেরত দেওয়া হবে। পারলে আপনারা করে দেন কাজটা। সাংবাদিকের কথা সূত্র ধরে তাকে আবারো বলতে শোনা যায় ওর সঙ্গে (গীতা সরকার) কথা হয়েছে টাকা ফেরত দেবো তাড়াতাড়ি।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপের এ কথোপকথনের অডিও সাংবাদিকদের কাছে আসার পর অভিযুক্ত যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহান টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন বিষয়টি সমাধান হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। সোমবার গীতা সরকারের সঙ্গে কথা হলে বলেন, সালেহা জাহানের কাছে এখনো আমি ৭০ হাজার টাকা পাবো। কিন্তু দেই দিচ্ছি করে তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। উল্টো আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে সালেহা জাহান ও তার স্বামী সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম জামাল অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসেন। এ সময় আমাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খুলতেও ভয় দেখানো হয়। এক পর্যায়ে হাত থেকে ফোন নিয়ে সালেহা জাহান নিজেই আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লিখেন- সালেহা জাহান আমর বড় আপু। একজন ভালো মানুষ। তার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে যারা অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন দয়া করে বন্ধ করুন। তা না হলে দুজনে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। গীতা সরকার।

গীতা সরকার বলেন, আমার ওয়াল থেকে লেখাটি ডিলিট করি। এরপরও তিনি স্ক্রিনশট রেখে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন জাগো নিউজকে বলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহানের টাকা নেওয়ার ঘটনা জেনেছি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভানেত্রীকে জানানো হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য একজন নেত্রীর টাকা নেওয়া একটি জঘন্যতম ও নিন্দনীয় কাজ। সালেহা জাহানের এমন কর্মকাণ্ড দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে।

28 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন