বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: ইরাক ও সিরিয়ায় মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও ইসলামি অনুভূতিতে আঘাতের কারণে বাংলাদেশের তরুণ ও যুবকরা জঙ্গিবাদের পথ বেছে নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনলজি বিভাগের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’ এ গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী।
গবেষণাটি বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ৫১ জন (বয়স ১৬-৩২) জঙ্গির ইন্টারভিউ, ১৪ জঙ্গির পরিবার, ১০ জন পুলিশ অফিসার ও ১৫ জন বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, গবেষণায় যেসব ‘এক্সট্রিমিস্টের’ সাথে কথা বলা হয়েছে তাদের সবাই জঙ্গিবাদে আসার কারণ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়াতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের কারণে রাগ ও ক্ষোভ থেকে এ পথে এসেছেন। তারা বলে এ ধরনের ঘটনা তাদের রিলিজিয়াস আইডেন্টিটির (ধর্মীয় পরিচয়) ওপর আঘাত। তাই এর প্রতিরোধ হিসেবেই তারা এ পথে এসেছেন।
জঙ্গিবাদে যারা জড়িয়েছেন তাদের বড় একটি অংশ ইন্টারনেটের প্রোপাগাণ্ডামূলক পোস্ট দেখে এ পথে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, জঙ্গিদের যখন ট্রেনিং দেয়া হয় তখনই তাদেরকে টার্গেট ঠিক করে দেয়া হয় যে কাকে হত্যা করতে হবে। ট্রেনিংয়ের সময় ভিক্টিমের ছবি দেখিয়ে তার ‘কর্মের’ বিষয়ে ব্রিফ করে। ব্রিফের সময় তাদের কোরআন-হাদিসের কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা ও যুক্তি দেখিয়ে বোঝানো হতো যে এসব ব্যক্তির পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এরপর ট্রেনিং শেষেই তারা ভিক্টিমকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে।
গবেষণা আরো বলছে, জঙ্গিদের অধিকাংশের পরিবারেই ঝগড়াঝাটি বা নানা ধরনের সংঘাত লেগে থাকতো। ছোটবেলা থেকে তাদের চলাফেরায় অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, মেয়ে ও বিধর্মী কারো সাথে কথা বলতে দেয়া হতো না অধিকাংশের পরিবার থেকে।
নারী জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলে গবেষণায় বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই পরিবারে নিগৃহীত ছিল। কেউ তাদের পাত্তা দিতো না, তাদের কথার কোনো দাম ছিল না পরিবারে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, কারো সন্তান যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায় সেজন্য ছোটবেলা থেকে বাবা-মাকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।
এর আগে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম তরুণদের উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রথমত একজন ব্যক্তি হতাশা, বঞ্চনা ও পারিবারিক নাজুক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ধর্মের দিকে ধাবিত হয়, এরপর তারা আশপাশে ও ইন্টারনেটে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রবাদীদের সংস্পর্শে আসে, পুরনো বন্ধুদের রেখে নতুন সমমনাদের সাথে নিজের সমস্যার বিষয়ে আলোচনা ও শলা-পরামর্শ করা, শর্টকাট উপায়ে পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভে বিভোর হয়ে থাকা, যে কোনো কর্মকাণ্ড ও সহিংসতাকে সঠিক বলে মেনে নেয়া, সহিংস উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া।
এর আগে সকালে দুই দিনব্যপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
জাতীয় খবর