বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ অপরাহ্ণ, ২৭ মার্চ ২০১৭
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল বাহিনীর প্রধান রেজাউল চৌধুরী জেলহাজতে থাকায় অবৈধ বালির ব্যবসা, বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও হাইজ্যাকসহ বহু অপরাধ বন্ধ হওয়ায় জনসাধারণ স্বস্তিতে রয়েছে। বিচারকের দায়ের করা মামলা এবং ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রেজাউল বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্ম ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় ওই বাহিনীর অন্য সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
রেজাউল জামিন পেলে আবারও সন্ত্রাসী জনপদে পরিণত হবে নলছিটি উপজেলা-এ আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে নলছিটিবাসীর মনে। কারাগারে দেখা করতে যাওয়া লোকজনের কাছে রেজাউল জামিনে বের হয়ে নলছিটির সাংবাদিকদের খুন-জখম ও পঙ্গু করার হুমকি দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার বাহিনীর সদস্য অজ্ঞাত এক স্কুল পড়ুয়া বোরকা পরিহিত মেয়েকে টানা-হেচড়া করে শ্লীলতাহানী, বোরকার মুখোশ খুলতে ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করে কান ও পা ধরানোর ঘটনা সাংবাদিকরা পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ ও প্রচার করায় দেশ-বিদেশে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। র্যাব-৮ এর একটি প্রতিনিধি দল গত ৫ মার্চ রেজাউল বাহিনীকে আটকের জন্য নলছিটিতে গেলেও নলছিটি থানা পুলিশ নাটকীয়তার মাধ্যমে সন্ধ্যায় রেজাউলকে আটক করে এবং গভীর রাতে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়।
বিষয়টি জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হলে ফেসবুকে নিন্দার ঝড় ওঠে। অপরদিকে সন্ত্রাসী রেজাউলের অবৈধ কর্মকান্ডের অংশীদার প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির পরামর্শে গত ৭ মার্চ ঝালকাঠীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে(১ম) স্থানীয় চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির নালিশী অভিযোগ(এমপি-১৩২/১৭) দায়ের করে।
আদালত বিষয়টি আগে থেকেই অবগত থাকায় মিথ্যা নালিশী অভিযোগ খারিজ করে আদালতের বিচারক এইচ এম কবির হোসেন বাদী হয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০(১)(সি) ধারা অনুযায়ী রেজাউল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ২৯৫এ/৩৫৪/৫০৬/৫০৯ ধারায় অপরাধ আমলে নেন। যার সি/আর মামলা নং- ৪১/১৭।
সন্ত্রাসী রেজাউল জেলে যাওয়ার খবরে নলছিটিবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। জনগণ আনন্দ উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করে।
রেজাউল জেলে যাওয়ায় তার বাহিনীর সদস্যরা গাঢাকা দেয়। জানা গেছে- রেজাউল বাহিনী নলছিটি বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করত, যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। রেজাউল প্রশাসন ও কতিপয় প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে কয়েক বছর যাবত নলছিটিতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় রেজাউল বাহিনীর ওই ড্রেজারটি নলছিটির সুগন্ধা নদী থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও রেজাউল বরিশাল পার্ক বাংলা থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাসে কিস্তিতে হোন্ডা ত্রুয় করেন। ৫ বছরেও কিস্তিতে ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করায় রেজাউল জেলে থাকার খবরে গত ২২ মার্চ হোন্ডা উদ্ধার করে নিয়ে যায় কোম্পানি। সন্ত্রাসী রেজাউল তার ডিস লাইনে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে সরকারের আয়কর ও ভ্যাট ফাকি দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
অবৈধ বিদ্যুত সংযোগের ব্যাপারে বাধা দিতে গিয়ে রেজাউলের হামলার শিকার হয়েছেন ওজোপাডিকোর নলছিটি উপজেলা শাখার ইঞ্জিনিয়ার নাসির ও লাইনম্যান ইলিয়াস। পৌর মেয়রের কাছে বিচার চেয়েও বিচার পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওজোপাডিকোর নলছিটিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজনকে চাঁদার দাবীতে মারধর করে এই রেজাউল।
বিষয়টি নলছিটি থানায় এজাহার দিলেও রেজাউল বাহিনীর দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ওসি একেএম সুলতান মাহমুদ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। রেজাউল ও তার বাহিনীর সদস্যদের আয়ের বড় উৎস্য চাঁদাবাজি ও হাইজ্যাক। চাঁদাবাজি ও হাইজ্যাকের শিকার অনেকে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের কতিপয় ও প্রভাবশালীদের শেল্টারের কারনে ধামাচাপা পড়ে যায়।
নলছিটিতে রেজাউল বাহিনীর চাঁদাবাজি, টাকা পয়সা ও মোবাইল হাইজ্যাক নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। রেজাউলের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রেজাউল জামিন পেলে নলছিটি আবারো চাঁদাবাজি ও হাইজ্যাকের শহরে পরিণত হবে- এ আশঙ্কা নলছিটিবাসীর। পাশাপাশি রেজাউল ও তার বাহিনীর দ্বারা খুন-জখম ও পঙ্গু করার হুমকিতে নলছিটির সাংবাদিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।”