সদরঘাট থেকে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে ঢাকা-বরগুনা রুটের এমভি কিং সম্রাট লঞ্চে উঠেছিলেন গৃহবধূ পরী। লঞ্চে সারা পথই দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন তিনি। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে দুই শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু লাভ হয়নি তাতে। মায়ের ভারাক্রান্ত মন দেখে ঘুম হয়নি কারো।
চাঁদপুর ছেড়ে লঞ্চটি যখন মেঘনার মাঝখানে, রাত তখন ১১টা। মা পরী বেগম লঞ্চের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট শিশু নাজিয়াও পিছু নেয় মায়ের। হঠাৎ গহীন অন্ধকারে ঝাঁপ দেন মা পরী বেগম। মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায় ছোট্ট শিশু নাজিয়াও। এদিকে, মা আর বোনকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অপর শিশু নুসরত (৭)।
মেঘনায় ঝাঁপিয়ে পড়া মা ও তার শিশু কন্যার খোঁজে ঘণ্টা খানেক লঞ্চ থামিয়ে রাখে কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে পুনরায় লঞ্চ ছেড়ে আসে বরগুনার উদ্দেশে। আজ সোমবার সকাল ১১টার দিকে বরগুনার ঘাটে এসে পৌঁছায় এমভি কিং সম্রাট নামের লঞ্চটি। বর্তমানে নুসরত নামের ছয় বছরের শিশুটি বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। সে তার বাবার নাম আক্তার হোসেন বলে জানিয়েছে। বাবা একটি চশমার দোকানে কাজ করেন। বাবা-মাসহ তারা যাত্রাবাড়ি থাকতেন বলেও জানায় সে।
শিশুটি আরো জানায়, তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম আল আমিন। মাওয়া চৌরাস্তায় তাদের গ্রামের বাড়ি। নানা দাদার নাম বলতে পারে না সে। তবে মানিক, টোকন এবং রাজিব নামের দুই মামার নাম বলতে পারে সে। এর মধ্যে রাজিব নামের এক মামা বিদেশে থাকে এবং মানিক নামের এক মামা জামা কাপড়ের দোকান দেন বলে সে জানায়।
লঞ্চটির মাস্টার আবুল হোসেন জানান, তারা উপরে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন। রাত ১১টার দিকে তাদের লঞ্চ তখন মিয়ার চরের কাছাকাছি। সাধারণ যাত্রীদের কাছে খবর পেয়ে তারা লঞ্চটি থামিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা যাচ্চিলো না। তখন মেঘনা ভীষণ উত্তাল ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরী বেগম তাঁর দুই শিশুকে নিয়ে লঞ্চের নিচতলার ডেকে ছিলেন। সেখানে তিনি কোরান শরীফ পড়েছিলেন। নামাজ পড়েছেন। কান্নাকাটিও করেছেন অনেক। বাচ্চাদের ঘুম পড়ানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। রাত ১২টার দিকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন পরী বেগম। এ সময় তাঁর নাজিয়া নামের অপর শিশু কন্যা মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়।
মাষ্টার আবুল হোসেন বলেন, উত্তাল মেঘনায় বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই তারা বেশ কিছুক্ষণ মা-মেয়েকে খোঁজার চেষ্টা করে না পেয়ে লঞ্চ চালিয়ে বরগুনা চলে আসেন।
এ ব্যাপারে বরগুনা থানার ওসি রিয়াজ হোসেন পিপিএম জানান, শিশুটির মা পরী বেগম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুরোপুরি তদন্ত না করে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, শিশুটির পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে যাত্রাবাড়ি এবং মাওয়া থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।