আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের দেশগুলোতে অন্যতম মহামারি রোগের নাম ম্যালেরিয়া। এ রোগ শনাক্তে ‘মাটিবাবু’ নামে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেটিতে পরীক্ষার নির্ভুলতার হার ৮০ শতাংশ।
সম্প্রতি এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিবছর ২০ কোটিরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। মারা যায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। এই আক্রান্তদের একটি বড় অংশ থাকে সাব সাহারান আফ্রিকায়। এ পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন আনতে ওই যন্ত্রটি ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
বছর চারেক আগে উগান্ডার কাম্পালার মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ব্রায়ান গিটা ও তাঁর বন্ধুরা স্যুটকেস আকারের যন্ত্র মাটিবাবু উদ্ভাবন করেন। স্থানীয় ভাষা সোয়াহিলিতে মাটিবাবু বলতে ‘চিকিৎসা’কে বোঝায়। যন্ত্রটি দামে যেমন কম, আবার পুনর্ব্যবহারযোগ্যও। সবচেয়ে বড় কথা, এতে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ কারণে শিশুদেরও সুইয়ের খোঁচা খাওয়ার ভয় থাকে না। মাটিবাবুতে পরীক্ষা সম্পন্ন হয় মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে।
ব্রায়ান গিটা জানান, যন্ত্রটি আলো আর চৌম্বকশক্তির সাহায্যে কাজ করে। মূলত এর লাল আলো আঙুলের চামড়া ভেদ করে নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর চৌম্বকশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জানা যায়, রোগীর নমুনায় ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু আছে কি না।
কাম্পালার মুলাগো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড ইজো বলেন, ‘আমাদের এখানে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিশুই তীব্র ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আবার অনেকেই খিঁচুনি, রক্তস্বল্পতা আর জন্ডিসে ভুগছে।’
চিকিৎসক ইজো বলেন, ‘যন্ত্রটিকে যদি ফোনের মতো হালকা ও সহজলভ্য করা যায়, সেই সঙ্গে পরীক্ষায় নির্ভুলতার হার ৯০ শতাংশ থেকে শতভাগ নিশ্চিত করা যায়; তাহলে এটি হবে ম্যালেরিয়া শনাক্তের একটি আদর্শ যন্ত্র।’
মাটিবাবুর মাধ্যমে শতভাগ নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী উদ্ভাবক ব্রায়ান গিটা। তাঁর ভাষায়, ‘আমি এই যন্ত্রটির উন্নয়নে চার বছর ধরে কাজ করছি। আমি দেখেছি যন্ত্রটির কয়েকটি প্রটোটাইপ বা প্রাথমিক সংস্করণ কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে যন্ত্রটিকে সূক্ষ্ম করতে আরো গভীরভাবে কাজ করছি। আমার বিশ্বাস, যন্ত্রটি সামনের দিনে আরো নিশ্চিত ফল জানাতে পারবে।’
জাতীয় খবর