৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

‘যদি সুন্দর একটা কাজ তুমি করে দেখাও আজ, জেগে উঠবে সবাই’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

‘যদি সুন্দর একটা কাজ তুমি করে দেখাও আজ, জেগে উঠবে সবাই’  কয়েক বছর আগে প্রচারিত এমন বিজ্ঞাপনের সুর ও কথা গুলো এখনো আমাদের হৃদয়কে  স্পর্শ করে যায়। তার আগে – পরে কিংবা এখনো যে সব বস্তা পচা বিজ্ঞাপন ঘন্টার পর ঘন্টা প্রচার করা হয় তাতে দর্শকের ধৈয্য চ্যুতি ঘটে । অনেকেই বিরক্ত হন। ‘ শতের বেশী চ্যানেল ডিশে, বিনোদনের অভাব কিসে!’ হাতে রিমোর্ট থাকলে এমন বীরত্ব দেখিয়ে আপনি একের পর এক চ্যানেল ঘুরাবেন ঠিকই কিন্ত হণুমান, বাদর , হাদারাম মার্কা বিজ্ঞাপনের  যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন না। ভারতীয় জনপ্রিয় যে সব চ্যানেলে সংসার ভাংগার কুট কৌশল দেখানো হয় তাতে মানুষ তো দূরের কথা শয়তান পর্যন্ত লজ্জায় জিভ কাটে ।   ভারতীয় এ সব টিভি চ্যানেল একটু পর পর হণুমানজি’র তাবিজ-কবজ বিক্রির মত বিজ্ঞাপন প্রচার করতে থাকে।

 

ইসলাম ধর্মের অপব্যবহার করেও প্রতারনার বিজ্ঞাপন প্রচার করেন আড়শি নগরের পরশিরা। যত তিতোই হোকে সে বিজ্ঞাপনের ভাষা কিংবা উপস্থাপনা তা আপনাকে অবশ্যই হজম করতে হবে যদি টিভি পর্দার সামনে গিয়ে বসেন। দেশী টিভি চ্যানেল গুলোতে ভারতীয় পন্যের বিজ্ঞাপনী দাপটে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন স্বদেশী আকাশে বিদেশী শকুনের আনাগোনা  কি ভাবে বেড়েছে।  ভারতীয় চ্যানেল আর স্বদেশী চ্যানেলে বিদেশী পন্যের বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনা উপভোগ না করার কোন উপায় নেই।   অসংখ্য অসংলগ্ন বিজ্ঞাপনের মধ্যে একটি হচ্ছে মুরগীর ফার্মের মালিক বিয়ে করতে গিয়ে পাত্রীর পিতাকে বললেন ‘তার ফার্মের মুরগীকে কোন কোম্পানীর খাবার কিনে খাওয়ান’।

 

কোম্পানীর নাম শোনার সাথে সাথে  পিতা তৃপ্তির ঢেকুর গিলে খুশীতে আতœহারা। ঘোমটা মাথায় কণ্যা লাজ লজ্জা ফেলে তাৎক্ষনিক হেসে উঠে বললেন ‘ বাবা আমি রাজি, পাত্রী রাজি হওয়ার আগেই তার কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা মুরগীর খাবার বিক্রয়কারী কোম্পানীর নাম শুনে ষোলআনা রাজি হয়ে হা সূচক হাস্যউজ্জ্বল সম্মতি জানান।  একজন ক্ষুদ্র জ্ঞানের দর্শক হিসাবে অদ্যবধি আমার মাথায় ঢুকছে না – বিয়ের পাত্রের যোগ্যতার  সাথে মুরগী ফার্মের মালিক সেই পাত্রটি কোন কোম্পানীর খাবার মুরগীকে খেতে দেয় তার কি সম্পর্ক আছে ? এমন বাস্তবতা বিবর্জিত বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন শুধু যে টেলিভিশনে সম্প্রচার হয় তা নয়। নিম্ম মানের পন্যের প্রলোভন যুক্ত বিজ্ঞাপন ও ছোট খাটো কিছু রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি নিরহ কিংবা দুষ্ট প্রকৃতির ব্যবসায়ীর ছবিযুক্ত বিজ্ঞাপনে এখন ভরপুর থাকছে দখিনের বিভাগীয় সদর দপ্তর বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক গুলো।

 

প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুন বেশী দৈনিক পত্রিকার ভিরে যে অশুভ প্রতিযোগীতা চলছে তাতে ঐ সব বিজ্ঞাপন ছাড়া যা খরচ নেওয়া হচ্ছে তা রীতিমত হাস্যকর। লজ্জাজনকও বটে। আবার যারা বিজ্ঞাপন প্রদানে মোটামুটি অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন বা কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিলে আসন্ন বিপদের আশংকায় থাকেন তারাও পত্রিকাওয়ালাদের এতটাই খাটো করে দেখেন যে এটা শুধু লজ্জাজনক নয়, রীতিমত গণমাধ্যমের জন্য অপমানজনক। যদিও ক্ষুদ্র টাকার এ সব বিজ্ঞাপন দাতারা পত্র-পত্রিকার এত ভিতরের খবর রাখেন না। ক্লাসিফাইড বা প্যানেল বিজ্ঞাপন ছাপার পর ২০/২২ টি পত্রিকাকে এক হাজার – দেড় হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। ভাল মানের কোন বহুল প্রচারিত দৈনিক ঐ টাকা গ্রহনে আপত্তি করলে তাকে আরো ৮/১০টি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়-‘ ওনাদের তো ৫’শ করে দেই। আপনার যদি তিন গুনেও না হয় তাইলে আর কি করবো দয়া করে আমার বিজ্ঞাপটি ছাপা বন্ধ করে দিন। এমন বিব্রতকর অবস্থা মোকাবেলা করেছি দৈনিক ভোরের আলোর প্রকাশনা দায়িত্ব নিয়ে।   তবে পৃথিবীর কোন খারাপ অভিজ্ঞতাও যে বিফলে যায় না তার প্রমান পেয়েছি দৈনিক দখিনের মুখ প্রকাশ করতে এসে। দৈনিক ভোরের আলোর অভিজ্ঞতার আলোকেই দৈনিক দখিনের মুখ প্রকাশনার শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ পত্রিকাটি বহুল প্রচারিত করবো। আর বহুল প্রচারিত পত্রিকায় কখনোই আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মূল্য অনুযায়ী কোন বিজ্ঞাপন ছাপাবো না।

 

 

যেই কথা সেই কাজ। মহান রব্বুল আল-আমীনের অশেষ মেহেরবানীতে কোন প্রকার বানিজ্যিক বা শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন ছাড়াই দৈনিক দখিনের মুখের পথচলা শুরু হয়। উদ্বোধনী সংখ্যা দৈনিক দখিনের মুখের কয়েক জন শুভাকাংঙ্খীর ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলেও পত্রিকার নির্দিষ্ট চারটি স্থানে চারটি প্যানেল বিজ্ঞাপন ছাপার মত নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারিনি। প্রতিষ্টা বাষির্কীর দিনে আমরা দৈনিক দখিনের মুখের অন্যতম পৃষ্টপোষক আমাদের একান্ত প্রিয়জন বিপ্লব কুমার রায় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে টিভিএস অটো বাংলাদেশ-এর একটি বিজ্ঞাপন প্রদান করেন। কোন প্রকার ক্লাসিফাইট ও শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে খবরে ভরপুর প্রতিষ্টা বাষির্কীর সংখ্যাটি যে দিন বাজারে গেল সেদিন সত্যি নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়েছে। আর বাংলা নতুন বছরের পথচলায় আমাদের সাহস উৎসাহ ও উদ্দিপনা কয়েক গুন বেড়ে গেছে। দীর্ঘ এ পথচলায় আমরা কোন প্যানেল বিজ্ঞাপন প্রথম পাতায় প্রকাশ করিনি।

 

 

তাই হয়তো বিজ্ঞাপন বিহীন টাটকা তরতাজা খবর আর খল নায়কদের মুখোশ উম্মোচনের ধারায় পাঠক খুবই ভাল ভাবে গ্রহণ করেছেন আমাদেরকে। বস্তাপচা মিথ্যা প্রলোভনের বিজ্ঞাপনের চেয়ে মানুষ খবর পড়তে বেশী আগ্রহী তা আমরা খুব ভাল ভাবেই প্রমান পেয়েছি। আজ বলতে দ্বিধা নেই পৃথিবীর সকল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের নীতিমালা রয়েছে। ইচ্ছা করলেই পুরো পৃষ্টা বিজ্ঞাপন ছেপে পাঠককে বঞ্চিত করার অধিকার পত্রিকা কর্তৃপক্ষের নেই। যদি এ নিয়ম আর নীতিমালা দেশের কোন গনমাধ্যমই মানছেন না। এর পিছনে নানান যুক্তিও রয়েছে পত্রিকা মালিকদের। আমরাও যে নীতি-আর্দশের কারনে এমন কাজ থেকে বিরত রয়েছি তা কিন্ত নয়। এটা বললে বলা হবে ‘আংগুর ফল টক’ বলেই আমরা খাইনি। বিজ্ঞাপন পাইনি বলে সুযোগের অভাবে সৎ সেজে নীতি কাব্য বলছি। বিজ্ঞাপন যে কোন পত্রিকার প্রান এটা পত্রিকাওয়ালারা খুব ভাল ভাবেই জানেন। তবে পাঠক আমরা কি সত্যিই প্রথম পাতায় ছাপার মত কোন প্যানেল বিজ্ঞাপন পাইনি? না এটিও সঠিক নয়। কারন আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকা যদি বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে আমরা বঞ্চিত হবো এমন  কোন সুযোগ নেই।

 

এখানেই আমরা আমাদের প্রিয় পাঠকদের স্বার্থে অভিজ্ঞতার আলোকে নীতিটি অবলম্বন করেছি। অর্থাৎ অপমানজনক মূল্য হারে বিজ্ঞাপন বর্জন করে সেখানে পাঠকের জন্য মহা মূল্যবান খবর প্রকাশ করেছি। এর সু-ফল এখন দখিনের মুখের ঘরে। কারন পাঠকরা জেনে গেছেন বিজ্ঞাপন নয়, খবরে ভরপুর পত্রিকা হচ্ছে দৈনিক দখিনের মুখ। তাইতো অত্যান্ত সচেতন সজাগ পাঠকের হৃদয় আমরা জয় করতে সক্ষম হয়েছি। একটি সুন্দর কাজ কেউ ঝুকি নিয়ে করতে পারলেই মানুষ জেগে  উঠেন। এখনো দখিনের মানুষ ভাল কিছুর পক্ষে রয়েছে তার প্রমান আর আতœতৃপ্তি নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর।

 

পরিশেষে বলতে চাই কথায় আছে “একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে, একটি মানুষ মানুষ হলে বিশ্ব জগত্ টলে”। বিখ্যাত উক্তিটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।  আমরা আজ বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ না করতে পারলে তার    ফল কখনোই আশানুরূপ হয় না। আমরা যদি শুরুতেই এমন কঠোর মনোভাব নিয়ে নিজেদের সম্পাদকীয় নীতিতে অটল না থেকে সামান্য কয়েকটি টাকার লোভে মোটা-তাজা করনের হারবাল বিজ্ঞাপন অশ্লীল ভাষায় প্রকাশ করতাম তা হলে আজ হয়তো পাঠকের হৃদয়ে আমাদের এমন প্রিয় একটি স্থান তৈরী হতো না। ব্যক্তির সমগ্র কার্যাবলী ও গুনাগুন বিচার করে তার মূল্যায়ন হয়।

 

আর যে ব্যক্তিরা পত্রিকা পরিচালনার সাথে যুক্ত তাদের নিত্য দিনই পাঠকের কাঠ গড়ায় দাড়াতে হয়।  পাঠকের বিচারেই পত্রিকার মানদন্ড নির্ধারন হয়ে থাকে। নিজে পত্রিকার মালিক-সম্পাদক কিংবা প্রকাশক তাই নিজের একাধিক বড় বড় ছবি ছাপানো আবার বিশাল হরফে সর্বাধিক প্রচারিত, সেরা পত্রিকা, শ্রেষ্ট দৈনিক নিজে লিখে দেওয়া যায় সেটা কখনোই গ্রহণ যোগ্য না। এ জন্যই কথা বলে ‘ নিজে যাকে বড় বলে, বড় সে তো নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সে তো হয়’। পাঠকের বিচার বিশ্লেষনে দৈনিক দখিনের মুখের মানদন্ড নির্ধারন হবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। আর আমরা পাঠকের মতামতকে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছি। অতএব সেই মতামত হবে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।

 

 লেখক: লিটন বাশার, সাংবাদিক

54 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন