নৌপথের যাত্রীদের জিম্মি করে আন্দোলন করতে চান না নৌ-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। সেক্ষেত্রে তারা পরিবার নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চান।
কোরবানির ঈদের পূর্বে অনির্দিষ্টকালের ‘ধর্মঘটে’ ঘরমুখ মানুষের সমস্যার কথা বিবেচনায় রয়েছে কি না?- এমন এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির আহ্বায়ক বুলবুল আহমেদ এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন করব না। তবে অন্যদের মতো সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে চাই।’
ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের এ আর খানের হেড মাস্টার নৌ-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বুলবুল আহমেদ। এক মাসে সাতবার লঞ্চ পরিচালনা করেন তিনি। বাকি সময় বসে থাকেন।
নৌ মন্ত্রণালয় যেখানে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাহলে মালিকপক্ষ কেন মানছে না- এ বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না? জবাবে বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই সমস্যা ২০১২ সালের শেষ থেকে। সেই সময়ে আন্দোলন করেছিলাম মধ্যবর্তী ভাতা নির্ধারণ ও নৌ-শ্রমিকদের বেতন কাঠামো তৈরির জন্য। তখন বলা হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৬ সালেও দিচ্ছে না অধিকাংশ লঞ্চ মালিকরা।’
তিনি জানান, সুরভী, সুন্দরবন লঞ্চসহ কয়েকটি লঞ্চ শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেয়। তবে যাদের লঞ্চের সংখ্যা কম, তারাই ঝামেলা করছে। বর্তমানে লঞ্চের মাস্টার, সুকানী, লশকর ও ড্রাইভারদের বেতন দেওয়া হয় দূরত্ব ও যাত্রী ধারণ ক্ষমতানুযায়ী।
নৌ পরিবহণের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছে তেল পরিবহণ জাহাজের মালিকরা। এ ছাড়া ট্যাংকার গ্রুপ এবং গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকরাও নৌ শ্রমিকদের দাবি সর্বনিম্ন বেতন নয় হাজার টাকা মেনে নিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ কারগো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (যাদের একটি বা দু’টি জাহাজ রয়েছে) হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে ঝামেলা করছে বলে অভিযোগ নৌ শ্রমিক নেতাদের।
শ্রমিক নেতারা জানান, বরিশালের যাত্রীদের ভাড়া ২৫০ টাকা। তবে মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় ভাড়া ১০০ টাকা আদায় করা হয় যাত্রীদের থেকে। রোজার ঈদের পর পটুয়াখালী থেকে সদরঘাট ভাড়া রাখা হতো মাত্র ৫০ টাকা। তারপরও লঞ্চ মালিকদের লোকসান হতো না। তাদের লোকসান হয় শ্রমিকদের বেতন বাড়ালে।
নৌ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে এবং শ্রম আইন অনুযায়ী লঞ্চ মালিকরা বেতন দিলে একজন লঞ্চের মাস্টার সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। নাবিকসহ ১৫ জন টেকনিক্যাল শ্রমিক দরকার হয় একটা লঞ্চ চালাতে। তবে লঞ্চ চলাচলের মূল দায়িত্বে থাকেন দুইজন মাস্টার, দুইজন সুকানী ও দুইজন চালক।
লঞ্চ মালিকরা নৌ শ্রমিকদের দাবি না মেনে নিলে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
মজুরি বৃদ্ধিসহ নৌযান শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে সৃষ্ট অচলাবস্থার সমাধানে নৌযান মালিকদের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে ধর্মঘটের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে কিছু সংখ্যক লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে এবং সদরঘাটে ফিরে আসছে।
মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নৌযান চলাচল স্বাভাবিক আছে। গতকাল বুধবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অর্ধশত লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
আজ ধর্মঘটের তৃতীয় দিন। আজও কিছু লঞ্চ ছেড়ে গেছে বলে বৈঠকে মালিকেরা জানিয়েছেন। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, তাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর