বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ অপরাহ্ণ, ২৮ জুন ২০১৬
বরিশাল: পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়ার পরও দাবিকৃত আরো যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের চাঁদশী গ্রামে মর্জিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ স্বামী নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আজ মঙ্গলবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
নির্যাতিত গৃহবধূর অভিযোগ ও মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১০ সালে অক্টোবরে গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের আব্দুর রহমান শাহর মেয়ে মর্জিনা আক্তারের (২৫) বিয়ে হয় একই উপজেলার চাঁদশী গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে নাসির হাওলাদারের (৩৩) সঙ্গে। বিয়ের সময় কনের বাবা আব্দুর রহমান জামাতা নাসির হাওলাদারকে নগদ দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রসহ প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল যৌতুক দেন।
গৃহবধূ মর্জিনার বাবা আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, বিয়ের পর ছয় মাসের মধ্যে জামাতা নাসির ব্যবসার জন্য নতুন করে দুই লাখ টাকা দাবি করলে এক লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি এক লাখ টাকা না দেওয়ায় প্রথমে তাঁর মেয়েকে মারধর করা হয়। বিয়ের পর গত পাঁচ বছর বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক নেন নাসির হাওলাদার। দাবিকৃত টাকা না দিলেই তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করা হয়। এমনকি বিয়ের সময় মেয়েকে দেওয়া গহনা ও আসবাবপত্র বিক্রি করেন নাসির। বিষয়টি নিয়ে এলাকার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বহুবার সালিলে মীমাংসা করে দেন। চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কৃঞ্চ কানত্ম দে, নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, “একাধিকবার মীমাংসা করা হয়েছে।”
নির্যাতিত মর্জিনা আক্তার জানান, গত শনিবার স্বামী নাসির উদ্দিন বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আনার জন্য বলেন। টাকা আনতে অস্বীকার করায় স্বামী নাসির হাওলাদার, ভাসুর নজরুল ইসলাম ও জা হেলেনা আক্তার তাঁকে বেদমভাবে মারধর করেন। একপর্যায়ে দরজার ঢাসা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির কলাবাগানে ফেলে রাখেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চাঁদশী গ্রামের রাজু হোসেন (৪৫), কাওছার হোসেন (৩০) জানান, তারা নির্যাতিত গৃহবধূ মর্জিনার বাবা আব্দুর রহমান শাহকে মোবাইলে জানালে তিনি ও বড় ভাই সোহেল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মর্জিনাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গত চার দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন মর্জিনা। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সেকেন্দার আলী জানান, রোগীর মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় আঘাতজনিত কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ তবে বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বামীর নাসির উদ্দিন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে ভাসুর নজরুল ইসলাম বলেন, “স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ সত্য কিন্তু আমাকে ও আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। নির্যাতনের সঙ্গে আমরা জড়িত নই।”
এ ঘটনায় মর্জিনার বাবা আব্দুর রহমান শাহ বাদী হয়ে জামাতা নাসির হালাদার, তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম, স্ত্রী হেলেনা আক্তারকে আসামি করে নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে গত সোমবার গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গৌরনদী মডেল থানার ওসি আ. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, “প্রধান আসামি নাসির হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে আজ মঙ্গলবার জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”