বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ১০ অক্টোবর ২০১৬
বরিশাল: খোদ দলের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে এবার পাবলিক টয়লেট দখল করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সাথে তারা প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত একটি অটোরিকশা স্ট্যান্ডও নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে গেছে। এমনকি তাদের প্রতিরোধে এগিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে ৫ অটোরিকশাচালক এখন খেসারত দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের স্থপতির ছবি টাঙিয়ে এই দখল সন্ত্রাস চালানো নিয়ে এলাকায় ঢের সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর বাজারের এই ঘটনায় স্থানীয় আ.লীগ নেতারাও ক্ষুব্ধ। তবে দখলবাজদের দৌরাত্ব্যের কাছে এক ধরণের অসহায় হয়ে পড়ায় কেউ মুখ খুলছেন না। কারণ দখলবাজদের ক্ষমতাসীন মহলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা শেল্টার দিচ্ছেন। এমনকি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে যে টাকা চাঁদা উঠছে তার একটি অংশও ওই মহলটি নিচ্ছে বলে কানাঘুষা শোনা যায়।
এমতাবস্থায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে- বাজার সংলগ্ন পাবলিক টয়লেটটিতে পাশে অবস্থিত ছিলো একটি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। সেই স্ট্যান্ড দখল নিতে গত শুক্রবার স্থানীয় সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম সোহাগের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ যুবক সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদের প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে ৫ অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরক্ষণে স্ট্যান্ডটি দখলের পাশাপাশি টয়লেটটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙিয়ে দেয়া হয়।
মূলত এ খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই উপজেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। যা গত ২দিন যাবত ওই এলাকায় টক অবদা নিউজে পরিণত অর্থাৎ সকলের মুখে মুখে। এমতাবস্থায় গত রোববার গণমাধ্যমকর্মীরাও ঘটনাস্থল ঘুরে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে, সেই সাথে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে দখল সন্ত্রাসের বিষয়টি। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- ঘটনা সংশ্লিষ্ট স্থানটি মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বের হলেও পুলিশ কোন ভূমিকা রাখেনি। ফলে পুলিশের দায়িত্ব নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে।’
স্থানীয় একধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- শুক্রবার স্ট্যান্ডটি দখলে নেয়ার পরপরই শুরু হয়ে যায় সোহাগসহ তার বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজি। প্রতিটি অটোরিকশা থেকে তারা যাত্রী পরিবহণের ওপর একটি অংশ কেটে নিচ্ছে। সেই সাথে পাবলিক টয়লেটটিও ব্যবহারের ক্ষেত্রে অর্থ নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া নেতাকর্মীরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
তাদের অভিযোগ- যারা এই সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তারা আ.লীগের কমিটিতে নেই। এমনকি কর্মী বা দলের অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সাথেও তারা জড়িত নয়। অথচ দখলবাজদের দাবি হচ্ছে- তারা সকলে উপজেলা শ্রমিকলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং তাদের সেই কমিটিতে পদও রয়েছে। কিন্তু রহমতপুর বাজার কমিটির সভাপতি আ.লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন- টয়লেটে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে তাকে এক ধরণের অবমাননা করা হয়েছে।
তাছাড়া দলের পরিচয়ে তারা যে সন্ত্রাস করেছে তার শাস্তি বাঞ্চনীয় বলে মনে করছেন তিনি। এক্ষেত্রে আরও একাধিক নেতার অভিমত হচ্ছে- যারা এই সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তারা মূলত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নেমেছেন। বিশেষ করে এই ঘটনায় উপজেলা যুবলীগ সভাপতি কাজী মহিদুল ইসলাম লিটনের ভাষ্য হচ্ছে- দলের নাম ভাঙিয়ে ওরা ফায়দা লুটছে। যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ দেখছি বলে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সেটি আমার বোধগম্য নয়।
তবে বিমানবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার দাবি- ঘটনাস্থলটি বাবুগঞ্জ থানার এড়িয়ার মধ্যে হওয়ায় সে অ্যাকশনে যেতে পারছে না।’ এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের নিরাবতা নিয়ে। অবশ্য অনেকে সোজাসাফটা বলেও ফেলছে- মোটা উৎকোচ নিয়ে বিয়টি চেপে যাচ্ছে পুলিশ। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলছেন- কেউ অভিযোগ করেনি অ্যাকশনে যাই কী করে।’