বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ, ০২ জুন ২০১৬
বরিশাল: বরিশাল ছাত্রলীগের উদীয়মান নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নগরী। নিহত রেজার খুনের বিচার চেয়ে ছাত্রলীগের একটি অংশ আন্দোলন কর্মসূচিতে রাজপথ সরগম করে তুলেছে। সেই গ্রুপের সাথে একট্টা হয়ে মাঠে রয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী আওয়ামী লীগ ও জেলা ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা। কিন্তু রেজা হত্যাকান্ডে দায়ের করা মামলায় বরিশাল মহনগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিনকে আসামি করায় তার অনুসারীরাও প্রতিবাদী হয়ে মাঠে নেমেছে। বরিশালের রাজপথে পাল্টা কর্মসূচি পালন করে চাইছে ষড়যন্ত্রমূলক দায়ের করা ওই মামলা থেকে নেতার মুক্তি।
সেই সাথে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজার প্রকৃত খুনিদের বিচারও।’ কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সাদিক অনুসারীদের বুধবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রেজার ঘাতক জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেনকে দেখা গেছে (!) যদিও তাকে তেমন কোন বিশেষ ভুমিকা দেখা যায়নি।’ শুধু প্রতিবাদীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দাড়িয়ে থেকে রেজার খুনিদের ফাঁসি চেয়েছে! বুধবার বেলা ১১টার দিকে সদর রোডে পালিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে রাজীবের অংশগ্রহণ অনেকেই বাকাচোখে দেখেছেন। বিশেষ করে মানববন্ধন পরবর্তী খোদ সাদিক অনুসারীদের মধ্য থেকেই এমনটাই আওয়াজ এসেছে খুনি রাজীব এখন হয়ে গেছে ‘ধোয়াতুলসি পাতা’! আর নিরাপরাধীরা মামলার আসামি হয়ে রয়েছেন দৌঁড়ের ওপরে।’
যদিও রেজা হত্যাকান্ডে দায়ের করা মামলায় রাজিব এজাহারভূক্ত কোন আসামি নয়। কিন্তু সে যে হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছে তা কারও বুঝতে বাকি নেই। কারণ নিহত ছাত্রলীগ নেতা রেজাউর করিম রেজার ভাই রিয়াজ উদ্দিনের দায়ের করা প্রথম এজাহারে এই রাজীবই ছিলো ২নাম্বার আসামি। কিন্তু সাদিকের কারিশমায় সেই এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না হয়নি। এমনকি পরবর্তীতে যে এজাহারটি নথিভূক্ত হয়েছে তাতেও রাজীবকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে জেলা ছাত্রলীগের এই নেতার রয়েছে নিরাপদে। অথচ রেজার ভাই প্রথমে যে এজাহারটি ঘটনা সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার দাখিল করেছিলেন তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিলো রাজিবই ঘাতক। এবং তার পরিকল্পনা অনুযায়ীই রেজাকে বরিশাল পলিটেকনিকের সম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এমনকি নিহত রেজার ওপর সস্ত্রশ্র হামলায় সে নিজেও অংশ নিয়েছিলো। কিন্তু সাবেক চিফ হুইপ সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন হওয়াতে রাজীব মামলাটি থেকে নাটকীয়ভাবে পার পেয়ে যায়। অথচ সেই মামলায় জড়িয়ে দিয়ে এখন দৌঁড়ের ওপরে রাখা হয়ে সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে মহানগর সভাপতি জসিম উদ্দিনকে এ মামলায় অন্তর্ভূক্ত করায় তিনি নিরাপদে থাকতে বরিশাল ত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
সেই বর্তমানে বরিশাল শহরে নিজেকে নিরাপদ মনে না করায় অন্যত্র ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন হিরন অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানও। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হচ্ছে, ‘ছাত্রলীগ হত্যাকান্ডকে ইস্যু হিসেবে দাড় করিয়ে নিজ ঘরনার প্রতিপক্ষ শিবিরের নেতাকর্মীদের হয়রাণির ওপরে রাখতে চাইছেন যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। কারণ হিরনের মৃত্যুর পরে এই যুবলীগ নেতা বরিশাল মহানগরের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন হতে ওয়ার্ড আ.লীগ ও জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বলয় তৈরি করে মাঠে রয়েছেন। যার বিরোধীতা করে মাঠে রয়েছে প্রতিপক্ষ শিবির অর্থাৎ হিরন অনুসারী বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের তরুণ নেতাকর্মীরা। যাদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন মহানগর সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান। আর এই অংশটির দিকে সু-দৃষ্টি রয়েছে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী পাশ্ববর্তী ঝালকাঠি জেলার বাসিন্দা আমুর হোসেন আমুর। এছাড়া হিরনপত্নী বরিশাল সদর আসনের জেবুন্নেছা আফরোজেরও নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রয়েছে। তাছাড়া মামলা নিয়ে যে নোংরা রাজনীতি চলছে সে সম্পর্কে বরিশাল পুলিশও অবগত।
যে কারণে রেজা হত্যাকান্ড নিয়ে দায়ের করা বিরোধী শিবিরের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তেমন সুবিধা নিতে পারছে না ওই অংশটি। এক্ষেত্রে পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, মামলাটি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া কথিত যে যুবলীগ নেতা মেহেদি হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে সেও অনেক তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যমতে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এছাড়া গ্রেপ্তার মেহেদিকে আরও জিজ্ঞাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, রেজাউল করিম রেজা এবং জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তাছাড়া উভয়েই চেয়েছিলেন ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বরিশাল পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রলীগ কমিটিতে তাদের অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে।
যা নিয়ে উভয়ে মধ্যে বিরোধ চরম আকারে ধারণ করে। সেই বিরোধ নিরসনে উভয় নেতাকে নিয়ে গত ২৭ মে রাত ৮টার দিকে নগরীর কালিবাড়ি রোডে যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বাসায় একটি বৈঠক করেন। সেখানে কলেজ কমিটি গঠন নিয়ে রাজীবের অনুকুলে সাদিক অবস্থান নেয়। এতে সাদিকের ওপর হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে রেজা তার সহযোগিদের নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বেরিয়ে যান।
হঠাৎ করে রাত সাড়ে ৯টার দিকে খবর আসে প্রতিপক্ষ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেনের অসুসারী সাইদুর রহমান, জাহিদ, রাকিব, রাজিব এবং ছোট মেহেদীসহ অন্তত ৯ জনের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হন রেজা, ফাহিম এবং মেহেদী।
তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলে সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসা পাওয়ার পরে রেজার মৃত্যু হয়। বাকি দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ওই রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সেই সস্ত্রশ্র হামলায় রাজীবও অংশ নিয়েছিলো।’