বার্তা পরিবেশক, অনলােইন:: কেরানীগঞ্জের কদমতলী বন্দডাকপাড়া এলাকায় রাসায়নিক পদার্থ মজুদ করে রাখা দুটি গোডাউনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পথচারী ও এলাকাবাসীসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দে কেপে উঠে পুরো এলাকা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশের পরিবেশ।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে একটি গোডাউনসহ আশপাশের কয়েক বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। প্রচণ্ড শব্দে অন্তত পাশের ৩০টি ভবনের দরজা-জানালার কাচ ভেঙ্গে গেছে।
একটি গোডাউনের মেঝেতে পুকুর আকৃতির বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাশের গোডাউনটি ধ্বসে পড়ে।
খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আধাঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিকে বিস্ফোরণের পরপরই উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। র্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
এ সময় কদমতলী সড়কে উৎসুক জনতার ভিড়ে যান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, কদমতলী সড়ক সংলগ্ন বন্দডাকাপাড়ায় আবাসিক এলাকার মধ্যে ৪টি গোডাউনে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ মজুদ করে রাখা হয়েছিল। গোডাউনগুলো সেমিপাকা। চারপাশে দেয়াল, উপরে টিনের চালা। তবে এ সব গোডাউনে কেউ ছিল না।
রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন গোডাউনগুলোর মালিক। জমি কিনে তিনি সেখানে গোডাউন বানিয়ে গোপনে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক মজুদ করে রেখেছিলেন।
বিস্ফোরণস্থলের পাশেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিনের বাড়ি। ঘটনার সময় তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে প্রচণ্ড শব্দে পুরো বাড়ি কেপে উঠে। পরপর তিনটি বিস্ফোরণ হয়। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বাসার শিশু ও নারীদের নিয়ে দৌড়ে রাস্তায় নেমে আসি।
তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণে পরপরই আহত অবস্থায় কয়েকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
কদমতলী সড়কের সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে পুরো এলাকা কেপে উঠে। কেমিক্যাল ভর্তি বস্তাগুলো উড়ে এসে রাস্তায় ডড়েছিল। ধোঁয়া আর কেমিক্যালের গন্ধে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছুটাছুটি করে নিরাপদে সরে যায়।
বন্দডাকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন রাজীব জানান, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন। বিস্ফোরণের সময় তার বাসার দরজা-জানালার কাঁচগুলো ভেঙ্গে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দে আর ধোঁয়ায় বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।
তিনি বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বিমান হামলা হয়েছে। না হলে এ রকম অবস্থা হওয়ার মতো না।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কদমতলী মেইন রাস্তার একটি গলির ভেতরে পাশাপাশি ৪টি সেমিপাকা ভবনকে গোডাউন বানানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গোডাউনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি গোডাউন ধ্বসে গেছে। আর অপর গোডাউনের দেয়াল, ছাদ কিছুই নেই। মেঝেতে সৃষ্টি হয়েছে পুকুর আকৃতির বিশাল গর্তের।
ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন কেমিক্যাল ভর্তি বস্তা। বিস্ফোরণের কারণে গোডাউনের সামনের মার্কেটে থাকা কয়েকটি দোকানের সাটার ভেঙ্গে বেকে আছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন আগে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় প্রাইম পেট এন্ড প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২২ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন এ সব অবৈধ কারখানা, গোডাউনের বিরুদ্ধে জোরাল অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে অবৈধ ২৪টি কারখানা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে এ সব গোডাউন করা হয়েছে। জমির মালিক একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। তিনি সেখানে গোডাউন বানিয়ে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ মজুদ করে রেখেছিলেন।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, গোপনে এখানে গোডাউন বানানো হয়েছিল। বিস্ফোরণের পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ রকম অবৈধ কারখানা শনাক্তের কাজ চলছে। কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের চিঠি দিয়ে এ সব কারখানার তালিকা করতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোস্তফা মহসিন বলেন, গোডাউনগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, সালফেট মনোহাইড্রেড, সোডিয়াম থাইসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মজুদ ছিল। কোনোভাবে মজুদ করে এ সব রাসায়নিকে আগুনের সংস্পর্শ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে।
আমাদের দুটি ইউনিট আধাঘণ্টার চেষ্টায় ধোঁয়া ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা তদন্তের পরই জানা যাবে।