বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৯:১৯ অপরাহ্ণ, ২৬ মে ২০১৬
রুশ ভাষায় বরিশালের গণমাধ্যম নিয়ে গবেষণা
রাশিয়ার শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে লামানোসোভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি (এমএসইউ)। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানসহ রুশ সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে রাশিয়ার এই আদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালের কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে এমএসইউ ১০৮ নম্বরে স্থান পায়। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
গত ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা অনুষদে ‘মিডিয়া গবেষণায় সমসাময়িক সমস্যা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিকতা অনুষদ, জাতীয় গণমাধ্যম গবেষণা অ্যাসোসিয়েশন এবং বেসরকারি গবেষণা কেন্দ্র ভিআই যৌথভাবে দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনের বহির্বিশ্বের মিডিয়া কাঠামো বিভাগে গবেষক জামিল খানের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং নিউ মিডিয়ার সঙ্গে বরিশাল নগরীর স্থানীয় পাঠক বা ব্যবহারকারীদের সম্পর্ক’ শিরোনামে ওই প্রবন্ধে প্রায় ৫ মাসের একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
প্রসঙ্গত, জামিল খান মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগে প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন। বিভাগের অধ্যাপক ভিক্তর বারাবাশের অধীনে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম এবং নিউ মিডিয়া নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন। তিনি বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকার স্থায়ী নিবাসী। রুশ ভাষায় বরিশালের স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর এটিই প্রথম কোন গবেষণা কর্ম বলে জামিল খান জানিয়েছেন।
বরিশাল থেকে পরিবেশিত মেইনস্ট্রিম বা প্রথাগত মিডিয়ার (প্রিন্ট, অনলাইন ও রেডিও) বর্তমান হালচাল, কনটেন্ট বিন্যাস, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট পরিধি, ইন্টারঅ্যাকটিভিটি, ইউজিসি কনটেন্ট ব্যবহার, পাঠকদের সাথে যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও সাংবাদিকতা পেশায় বিরাজমান সমস্যাবলী গবেষণায় উঠে আসে। প্রচার সংখ্যা আর ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে শীর্ষ প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার একটি তালিকা এতে তৈরী করা হয়।
স্বল্প দাম আর সহজ লভ্যতার কারণে স্থানীয় দৈনিক খবরের কাগজের ওপর নির্ভর করেন বরিশালের মধ্য বয়সী পাঠকেরা। তাছাড়া বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে এই গণমাধ্যমটি নিয়ে তাঁদের বেশি ভরসা। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৪০-৬৫ বছরের পাঠকদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাত্যহিক জীবনের কোন একফাঁকে স্থানীয় পত্রিকায় চোখ বোলান। তবে তরুণ পাঠকদের মাঝে স্থানীয় পত্রিকা পড়ার প্রবনতা তেমন নেই বললেই চলে।
বরিশালে কবে থেকে অনলাইন পত্রিকা চালু হয়েছে এ নিয়ে অনেক মতবিরোধ থাকলেও ২০০৭ সালে প্রথম এ জনপদে অনলাইন পত্রিকার আত্বপ্রকাশ ঘটে বলে এক প্রকার নিশ্চিত হওয়া গেছে। বরিশাল থেকে বর্তমানে প্রায় ২০টি অনলাইন পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। অনলাইন সংস্করণ রয়েছে অন্তত ৮টি প্রিন্ট পত্রিকার। অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি অনলাইন সাংবাদিকতার গুনগত মান। মূল সংবাদ পরিবেশন করা ছাড়াও পাঠকদের আকর্ষন তৈরী করতে পত্রিকাগুলোর নানা রকম মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট ও ইন্টার-অ্যাকটিভ সেবার মান বাড়ানো উচিত। তাছাড়া বেশিরভাগ পত্রিকা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে অনেক উদাসীন এবং তা ব্যবহারের জন্য তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই।
প্রায় সময় দেখা যায়, অনুমতি ছাড়াই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো জাতীয় পত্রিকার কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য বা ছবি প্রকাশ করে কপিরাইট আইন লংঘন করছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরই মধ্যে মানসম্মত অনলাইন পত্রিকা হিসেবে ‘আমাদের বরিশাল ডটকম’, বরিশালটাইমস.কম (www.barishaltimes.com), ‘বরিশাল নিউজ ডটকম’, ও ‘বরিশাল লাইভ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ দেশ-বিদেশে বসবাসরত বরিশাল কমিউনিটির মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছে। ২৪ ঘন্টা তাৎক্ষণিক তরতাজা সংবাদ পরিবেশনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি আর মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট উপভোগের সুযোগ থাকায় এসব পত্রিকা পাঠক চাহিদা পূরণ করতে পারছে।
বরিশালের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে। দিনের অনেকটা সময় তাদের কাঁটে ফেসবুক, টুইটার আর ইউটিউবে ভিডিও দেখে। অবসর সময়টায় বিনোদনের খোরাক যোগাতে তাঁরা এসব অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন।
প্রবন্ধের সোশ্যাল মিডিয়া ও নাগরিক সাংবাদিকতা অংশে তরুণরা সক্রিয় রয়েছেন এমন বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ আর গ্রুপের কথা উল্লেখ করা হয়। নাগরিক সাংবাদিকতা চর্চার প্লাটফর্ম হিসেবে বরিশালের এসব গ্রপ কিংবা পেজ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এখন নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। বিশেষকরে বরিশাল জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত ‘বরিশাল সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফেসবুক গ্রুপটির কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের আগস্টে চালু হওয়া এ গ্রুপের মাধ্যমে বরিশালবাসীকে তরিৎ সেবা নিশ্চিত করার উদ্ভাবনী কৌশল দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে প্রশাসন আর নাগরিকদের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগের একটি প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে সেখান থেকে কিভাবে নাগরিক সেবা দেয়া আর নেয়া যায় সে বিষয়টি বর্ননা করা হয়। গ্রুপ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বরিশালের তিনশর অধিক নগরিক সমস্যার সমধান করা হয়েছে। নাগরিকদের মনে ইতিবাচক ধারনা তৈরী করতে সৃজনশীল এ উদ্যোগটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
সাংবাদিকতার আলোকে এ গ্রুপের প্রতিটি সদস্য বস্তুত একজন নাগরিক সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করছেন। কনটেন্ট প্রকাশের কাজে তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ কোন পোস্ট প্রকাশ করা কিংবা অন্যের দেয়া পোস্টে মতামত জানানোর কাজে তাদের স্মার্টফোনটি হচ্ছে যেন ‘সুইস আর্মি নাইফ’। নাগরিক সাংবাদিক সমাজের অনেক অসঙ্গতি, অনিয়ম কিংবা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরছেন। কখনও বা ‘ব্রেকিং নিউজে’-এর মত জরুরি খবর প্রচার করছেন তাঁরা। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষদের সমস্যা ও সম্ভাবনার গল্প বলে তাঁরা দিন বদলের সহযোগী হচ্ছেন, রচনা করছেন ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম’ চর্চার অনন্য দৃষ্টান্ত। সাধারণ নাগরিকের এসব পোস্টের লেখা, স্থিরচিত্র, ভিডিও কিংবা অডিও কনটেন্ট যা পেশাগত সাংবাদিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ খবরের সূত্র হয়ে ওঠছে। তাই নতুন খবরের সন্ধান পেতে গ্রুপটির নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন তাঁরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বরিশালের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নিজেদের অবয়ব, কনটেন্ট সেবার মান ও মিডিয়া প্লাটফর্মের বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। যদিও বিভিন্ন খাতে অনেক সমস্যা বিরাজ করলেও আগামীতে এ অঞ্চলে গণমাধ্যমের উন্নয়ন নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই সাথে নিউ মিডিয়া ব্যবহারের যে সুফল আজ বরিশালবাসী পেতে শুরু করেছেন তা ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
জামিল খান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ বিভাগ, পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো, রাশিয়া এবং নিউ মিডিয়া বিশেষজ্ঞ।
Inb.moscow@gmail.com