বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, ১৬ জুন ২০১৬
বরিশাল: অবৈধ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘লংকাবাংলা ফাইন্যান্স’ বরিশালবাসীর কাছে এখন একটি আতঙ্কিত নাম। ঋণ প্রদানের নামে এই প্রতিষ্ঠানটির গলাকাটা সুদে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। সেবার দোহাই দিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। সেই ঋণের সুদের টাকা তুলতে এই প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্ণধর গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। কোন গ্রাহক এই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ঋন নিয়ে নির্ধারিত সময়ে সুদের টাকা না দিতে পারলে তাদের ওপর চলে আসে নির্যাতনের খড়গ।
এমনকি সুদের টাকা বাবদ বাসা-বাড়ি থেকে মালামাল নিয়ে আসারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। তারা বলে আসছে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের লভ্যাংশ সময় মতো তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি টাকা দিতে ব্যর্থ হয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে প্রতিষ্ঠান কর্তারা এমন কথা বললেও কাজের সাথে রয়েছে অমিল। সম্প্রতিকালে ঋণের সুদের টাকার জন্য একাধিক গ্রাহকের বাসায় হানা দিয়ে মালামাল লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে। তাদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক’শ পরিবার। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মতে ঋণদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের মালামাল জব্দ করার ক্ষমতা রাখে না।
যদি কোন গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সহযোগিতা নেয়ার ইখতিয়ার রাখে। সুতরাং ঋনদারকারী বিতর্কিত লংকাবাংলা প্রতিষ্ঠান যা করে বেড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার বিকেলে বাজার রোড এলাকায় প্রভূপাদ মেডিকেল হলে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম হানা দিয়ে মালামাল লুটপাটের চেষ্টা চালায়। এসময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশে সোপর্দ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তব্যক্তিরা পুলিশকে ম্যানেজ করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এসএমই ঋনদানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলামের নির্দেশনায়ই সিরাজুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাজার রোডের ওই ওষুধের দোকানে হানা দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। এছাড়াও এই সিরাজুল ইসলাম এবং রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে লংকাবাংলার নাম ভাঙিয়ে একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে এমনিভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। যদিও বাজাররোডে ওই লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায়নি তার রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
তবে সিরাজুল ইসলামের সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের আলম ঢালী, রফিকুল ইসলাম, নীরব, চিনময় এবং বাসার মালিক জব্বার মহুরী জড়িত ছিলো। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন প্রতিষ্ঠানটির মালিক অমিত সুলিত সম্প্রতি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে চলে যান। তাদের কাছে অপর একটি বেসরকারি এনজিও প্রতিনিধি বাপ্পীও বেশ কিছু টাকা পাবেন। যে কারণে অমিত সুলিতের নগরীর ক্লাবরোড এলাকার বাসায় হানা দিয়ে বাপ্পী ২০লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়িতে হানা দিয়ে লংকাবাংলার কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম কোনো মুল্যবান মালামাল না পেয়ে শেষতক দোকানেই হানা দেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এরকারণেই মালামাল লুটপাটকালে জনরোষ থেকে ওই কাউন্সিলরই তাকে রক্ষা করেছিলেন।
এমনকি পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিতেও সহায়ক ভুমিকা পালন করেছিলেন বলে শোনা গেছে। এসময় সংবাদ সংগ্রহে মিডিয়াকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ছবি তুলতে গিয়ে তাদের লাঞ্ছিত করার খবর পাওয়া যায়। যে কারণে এই লংকাবাংলার কর্মকাণ্ড নিয়ে বরিশালে আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ফলে গ্রাহকদের গলাকাটা এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বুঝতে আর অপেক্ষা রাখে না বরিশালবাসীর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় রয়েছেন এম কেনান খান নামে এক ব্যক্তি। তার দাবি তিনি একজন সংবাদকর্মী। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা টাকা নিয়ে ফেরত না দিলে কি আর করার, বাধ্য হয়ে কঠিন সিদ্ধান্তেতো যেতেই হয়।
এতে অভিযোগ আসলে কি আর করার। তবে এসএমই বিভাগের দায়িত্বে থাকা রিয়াজুল ইসলামের ভাষ্য হচ্ছে, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের একজন অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গত রোববার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ ওঠায় কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কারণ বাজার রোডে তিনি যে দোকানে মালামাল জব্দে গিয়েছিলেন তা তার ব্যক্তিগত লেনদেনের কারন। যার দায়ভার প্রতিষ্ঠান বহন করতে নারাজ।
পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে রিয়াজ বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটি জীবন জীবিকার মানন্নেœায়নে সহায়ক ভুমিকা রাখছে। কিন্তু বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে এই কর্মকর্তার মন্তব্যের সাথে তাদের প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সংক্রান্ত কোন মিল পাওয়া যায়নি। বরং গ্রাহকদের অভিযোগ প্রথমদিকে নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ঋণ দিলেও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অধিক টাকা। তাদের টাকা পরিশোধ না করতে পেরে অনেকেই পথে বসেছেন।
কারণ ঋণের সুদের পরিমান এতোই বেশি যে ব্যবসা করে তা পরিশোধে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ে সেই ঋণের সুদ দিতে বিলম্ব হলে অপদস্থ হওয়ার পাশাপাশি বাসাবাড়ির মালামাল লুটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে এই হায়হায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছে গ্রাহকরা। এমতাবস্থায় তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে কোনো কোনো গ্রাহক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।