বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ২৬ অক্টোবর ২০১৬
বিদ্যালয়ের জমি ৫০ শতক। এর ১৬ শতক দখল করে চাল ও মরিচের কল এবং ভুসিমালের আড়ত বসানো হয়েছে। নতুন ভবন দখল করে বাস করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারের লোকজন। শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে।
এ অবস্থা ভোলার লালমোহন উপজেলার পূর্ব-চতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুল আরিফ ও উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে একপাশে পুকুর। অন্য পাশে চাল-মরিচের কল ও ভুসিমালের আড়ত। পাউবোর কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিজেবিও টেক্সটাইল ও জেভি ট্রেডার্সের লোকজন বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ওপরতলা দখল করে বসবাস করছেন। নিচতলায় কক্ষ দখল করে ও মাঠে মালপত্র রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ একতলা ভবনে। ভবনটির তিনটি কক্ষ। সেগুলোর দরজা-জানালা ভাঙা। মেঝেতে বেশ কয়েকটি গর্ত। ছাদের পলেস্তারা ও ঢালাইয়ের অংশ খসে পড়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাফর উল্যাহ বলেন, ছাত্ররা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায়ভার নেবে? ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাউবোর বাঁধের ব্লক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত। তাঁরা দ্রুত নতুন ভবন বিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান।
পাউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিজেবিও টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হেদায়াতুল ইসলাম বিদ্যালয় ভবনে থাকতে দিয়েছেন। তবে শিগগিরই নতুন ঘর নির্মাণ করে চলে যাবেন।
হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, জায়গা না থাকায় ঠিকাদারের লোকজনকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন পরই তো তাঁরা চলে যাবেন।
একাধিক ছাত্রছাত্রী বলে, মাঠে মালপত্র রাখায় তারা খেলতে পারে না। পড়ানোর (ক্লাস) সময় ট্রাক এসে মালপত্র ওঠানামা করে। ট্রাক ও কলের শব্দে তারা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। কলের হলুদ-মরিচ উড়ে এসে পড়ে চোখ জ্বলে।
প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৯৯২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হলে ২০১০ সালে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে ভবন নির্মাণ শেষ হলে সেখানে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়। ২০১৫ সালে ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হলে ভবন দখল করেন পাউবোর ডিভিশন-২-এর ঠিকাদার।
অনেক অনুরোধের পর দ্বিতীয় তলায় পাঠাগারের জন্য একটি কক্ষ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ১৬ শতক জমি দখল করে নুরনবী ও বেলাল নামের দুজন কল বসিয়ে চাল, ডাল, আটা, হলুদ, মরিচ ভাঙছেন। বিদ্যালয়ের পুকুরটিও ভোগদখল করছে অন্যরা। বিষয়টি লিখিত আকারে ২০১৫ সালে ইউএনও ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কলের মালিক মো. নুরনবী বলেন, ‘আমি ও বেলাল একজনকে মাসে ৭০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে কলটি চালাচ্ছি। তিনি কীভাবে বিদ্যালয়ের জমিতে ঘর নির্মাণ করেছেন জানা নেই।’