বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ, ২১ মে ২০১৬
বরিশাল: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ সমুদ্র উপকূলের আরও কাছাকাছি এসেছে। উপকূলের সন্নিকটে চলে আসায় কক্সবাজার ছাড়া সব সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার (২০ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে (নং-১৩) বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
শনিবার (২১ মে) বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে ‘রোয়ানু’। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ২১ মে বিকাল/সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।”
বিশেষ বুলেটিনে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আসবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে বিকেল থেকে বহাল থাকা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে পূর্বের ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে, উপকূলের জেলাগুলোর ২১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
দুর্যোগ সচিব শাহ কামাল মোবাইল ফোন বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপকূলের জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং সাগর থেকে জলোচ্ছ্বাস গড়িয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা।