বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৩০ অপরাহ্ণ, ১৪ মার্চ ২০১৬
যখন চারদিকে দুঃসংবাদের ছড়াছড়ি, ব্যাংক থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে, তখন শতাব্দী নামে এক কিশোরী আমাদের চেতনায় চাবুক মেরে জানিয়ে দিল কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়। কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হয়।
শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী শতাব্দী। পুরো নাম শামসুন্নাহার শতাব্দী। সে এবং তার সহপাঠীদের বাসে করে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। কিন্তু ওই রুটের বাসগুলো ‘মেয়েদের সিট নাই’ বলে তাদের নিতে চায় না। কিন্তু তারা এই সমস্যার কথাটি জানাবে, এত দিন তেমন কাউকে পায়নি।
গত শনিবার মহানগরে গণপরিবহনের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে ঝটিকা সফরে কুড়িল বিশ্বরোডের পাশে শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রীকে দেখেই শতাব্দী বারবার হাত তুলে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে থাকে, ‘আই হ্যাভ এ কোশ্চেন, মিনিস্টার ওবায়দুল কাদের!’
একটি কিশোরী এভাবে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছে দেখে অনেকেই অবাক হন। তাকে থামিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় কিছুটা সামনে এগিয়ে তার সমস্যাটা জানতে চাইলে শতাব্দী বলে, গুলিস্তান-আবদুল্লাহপুর ১২৩ বাসগুলো “মহিলা সিট নেই” বলে তাদের উঠতে দেয় না।
মন্ত্রী তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন পরদিন থেকেই তার স্কুলে আসা-যাওয়ার রুটে মেয়েদের বাস চলবে। সত্যি সত্যি রোববার সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি বাস শতাব্দী ও তার সহপাঠীদের নিতে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে পৌঁছে। খবরটি আগের রাতেই মেয়েদের জানানো হয়েছিল। বাস দেখে তো মেয়েরা আনন্দে আত্মহারা। তারা ভাবতে পারেনি মন্ত্রীর নির্দেশে পালিত হবে। কেননা মন্ত্রী-সাংসদেরা তো কত কিছুই বলেন। সব কি বাস্তবায়ন হয়? হয় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়েছে। এ জন্য মন্ত্রী মহোদয় ধন্যবাদ পেতে পারেন।
শতাব্দীর এই ঘটনা যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি মহানগরের গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাচারিতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশেষ করে মেয়েরা বাসে উঠতে নিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হয়। প্রথমত, বাসের চালক ও তাঁর সহকারীরা ভিড়ের বাসে মেয়েদের নিতে চান না। অধিকাংশ সময় “মেয়েদের সিট খালি নেই” বলে তাদের উঠতে বাধা দেওয়া হয়।
কিন্তু এর চেয়েও ভয়ংকর হলো পুরুষ যাত্রীদের অভব্য মানসিকতা। তাঁরা মেয়েদের সিটগুলোয় গ্যাট হয়ে বসে থাকেন। বাসে মেয়েরা উঠতে চাইলে প্রথমে তাঁরা চালক ও তাঁর সহকারীকে ধমক দিয়ে নিবৃত্ত করতে বলেন। তার পরও যদি মেয়ে যাত্রী বাসে উঠে পড়ে, মেয়েদের আসনে বসা পুরুষ যাত্রীরা আসন না ছেড়ে উল্টো চালক ও তাঁর সহকারীকে গালাগালি করেন। কোনো সহযাত্রী মেয়েদের আসন ছেড়ে দিতে বললে তাঁকেও নাজেহাল করতে দ্বিধা করেন না। এসব দৃশ্য দেখে কয়েক বছর আগে প্রচারিত ‘প্রথম আলো’র বিজ্ঞাপনটির কথাই মনে পড়ে। সেই বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, মেয়েদের সিট দখল করে এক পুরুষ যাত্রী মাতৃজাতির পক্ষে মেঠো বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। আর তাঁর সামনে একজন প্রৌঢ় ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন; সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অধিকাংশ পুরুষ যাত্রীর মানসিকতা এ রকম। এ নিয়ে বাসে হই হাঙ্গামাও কম হয়নি।
শতাব্দী মন্ত্রীকে সমস্যার কথা বলে তার ও সহপাঠীদের স্কুলে যাতায়াতের আপাতত সমস্যার সমাধান করেছেন। কিন্তু এ রকম তাৎক্ষণিক ও টোটকা ওষুধে মহানগরের পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। তারও আগে যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা যে মস্তান চক্রটির হাতে জিম্মি, তাদের কালোহাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। কয়েক বছর আগে বিভিন্ন রুটে স্কুল বাস চালু করা হয়েছিল। সেই বাস কেন বন্ধ হলো, কাদের কারণে বন্ধ হলো, সেটিও বোধ হয় খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।
আমরা শতাব্দীকে অভিনন্দন জানাই। মেয়েটি সাহস করে তার ও সহপাঠীদের সমস্যার কথা বলেছে বলেই সমাধান হয়েছে। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সব অচলায়তন ভেঙে শতাব্দীরা এগিয়ে যাক। ওরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।