তিন সঙ্গী মিলে ঠিক করেছিলেন সিংহের চোরা শিকার করবেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন দুটি পয়েন্ট ৪৫৬ বিগ গেম রাইফেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় বনের রাজার থাবায় বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে পঞ্চাশ বছরের ডেভিড বালোয়ির। দেহের সবটা খেয়ে ফেলেছে সংহের দল। পড়ে ছিল শুধু রক্তাক্ত মাথা। বাকি দুই সঙ্গী কোনোক্রমে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে বেঁচেছেন।
শিকার খেলায় মেতেছিলেন। ভেবেছিলেন মজাদার হবে এই গেম। কিন্তু প্রাণ দিতে হল সেই গেম খেলতে গিয়েই। তিন সঙ্গীর কাছেই ছিল শিকারের অস্ত্র। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ছিল ভুল। তিন জনে ঠিক করেছিলেন চাঁদের আলোতেও নয় একেবারে গাঢ় অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে শিকার করবেন সিংহের। ভুল সিদ্ধান্তের যে এরকম চরম মূল্য দিতে হবে তা বোধহয় কেউই আঁচ করতে পারেননি।
ডেভিডের হাতে অস্ত্র তো ছিলই বাকি দুই বন্ধু যাঁরা লিম্পোপো এলাকার উম্বাবাট গেম রিজার্ভে এসেছিলেন মোজাম্বিক থেকে। রাতের অন্ধকারে নেমেছিলেন সিংহ শিকারের খেলায়। কাল হল সেটাই। সিংহের দল ছিঁড়ে খেল ডেভিডকে। তবে মাথাটা একেবারে অক্ষত রেখে দেয় সিংহের দল। আর সে কারণেই তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
বড় বিড়াল শিকারের নেশা ছিল ডেভিড বালোয়ির। সেই নেশারই চরম মূল্য চোকাতে হয়েছে তাঁকে। তবে সিংহ দলের তাড়া খেয়ে তাঁরা তাঁদের পয়েন্ট ৪৫৬ উইনচেস্টার রাইফেল ফেলে পালিয়েছেন। অন্ধকারে সিংহের দল নজরে রেখেছিল তাঁদের। একটু পরেই তারা ঘিরে ফেলে ডেভিডকে। নিজেদের এলাকায় অপরের অনুপ্রবেশ মেনে নেয়না কেউই। বড় বিড়ালের দলও মেনে নেয়নি। জ্যান্ত মানুষটাকে রাতের অন্ধকারে ছিঁড়ে ফেলেছে তারা। তাঁর মাথা বাদ রেখে দেহের পুরো অংশটাই খেয়ে ফেলেছে। ডেভিডের আর্ত চিৎকারও বাঁচাতে পারেনি তাঁকে। তার দুই সঙ্গী ভয়ে পালিয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশের লেফটেনান্ট কলোনেল জিওপে জানিয়েছেন ‘ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার। তিন চোরা শিকারীকে আক্রমণ করে সিংহের দল। একজনকে মেরে খেয়ে ফেলে তারা।’ তিনি আরও জানান, ‘সিংহেরা ওই মানুষটির পুরো দেহটাই খেয়ে ফেলেছে কিন্তু তার মাথাটা ফেলে রাখে। সেটা দেখেই তাঁর পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে। ডেভিডের শালি তাঁর মোজাম্বিকে থাকা পরিবার থেকে একটি টেলিফোন পান। তাঁকে জানান হয় ডেভিডের দুই সঙ্গি জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিংহের দল ডেভিডকে খেয়ে ফেলেছে।’
জিওপে বলেন, ‘বাকি দুজন পালাতে সক্ষম হলেও ওই ব্যক্তি পালাতে পারেননি। পালিয়ে যাওয়া সঙ্গীরা ফিরে যায় মোজাম্বিকে। তারাই জানায় ডেভিডের পরিবারকে। তারপরই টেলিফোনে এই ঘটনা জানান হয় ডেভিডের শালিকে। তিনি এই ঘটনার বিবরণ আগেই শুনেছিলেন সেখানকার একটি বেতার মাধ্যমেও। সেই বার্তায় জানান হয়েছিল এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি সিংহের আক্রমণে মারা গিয়েছেন। যদি কেউ তাঁকে শনাক্ত করেত সাহায্য করতে পারেন তাহলে তিনি যিন সত্বর চলে যান হডসপ্রুইট পুলিশ স্টেশনে। এরপর তিনিই শনাক্তকরণের কাজটি করেন।’
সিংহ দিনে মানুষের জন্য অতটা ভয়ঙ্কর নয় যতটা তারা রাতে ভয়ঙ্কর। গাঢ় অন্ধকারে তাদের সামনে যাওয়ারই চরম মূল্য দিতে হয়েছে ডেভিডকে। জানা গেছে ওই এলাকা থেকে রাইফেল ও বেশ কিছু অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত চলছে।
বিশেষ খবর