বরিশাল: মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় আটক গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিম (২০) শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে ভালো ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাই শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি প্রথমে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। তবে কয়েকজন সহপাঠী বলেছেন, তাঁর মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রকাশ পায় একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়। এ সময় তাঁর আচরণেও পরিবর্তন আসে।
রাজধানীর দক্ষিণখানের ফাইদাবাদে ফয়জুল্লাহদের প্রতিবেশীরা তাঁর সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পুলিশও আর কিছু বলছে না। তবে তাঁর বাসা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও কম্পিউটার জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মাদারীপুরে মানববন্ধন করেছেন ওই কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা এবং পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
বুধবার বিকেলে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে কলেজের পাশে নিজ বাসায় কুপিয়ে জখম করে তিন দুর্বৃত্ত। স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে ফয়জুল্লাহকে আটক করে পুলিশে দেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় মামলা হয়নি।
ফয়জুল্লাহ বাবা-মায়ের সঙ্গে দক্ষিণখানের ফাইদাবাদে একটি পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। পড়তেন উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে। এই কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
কলেজ সূত্র বলেছে, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে ২০১৪ সালে সেখানেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন ফয়জুল্লাহ। তাঁর শ্রেণিশিক্ষক বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ফয়জুল্লাহর উপস্থিতি ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিল। এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালে ফয়জুল্লাহর মায়ের কাছে জানতে পারেন ফয়জুল্লাহ নিখোঁজ। এ জন্য ১২ জুন রসায়ন-এর লিখিত পরীক্ষায় তিনি অংশ নেননি। তিনি বলেন, ফয়জুল্লাহর মধ্যে কোনো উগ্রতা ছিল না। পত্রিকায় তাঁর ছবি দেখে প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি, ছেলেটা এমন কাজ করতে পারে।
ফয়জুল্লাহর এক সহপাঠী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মাধ্যমিক পর্যন্ত তাঁর আচরণ স্বাভাবিক ছিল। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় কলেজের বাইরের কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। এরপরই তাঁর আচরণে পরিবর্তন আসে। আরেক সহপাঠী বলেন, ‘কিছুদিন থেকে ফয়জুল্লাহর মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা দেখা গেছে। ধর্ম নিয়ে কিছু বললেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাত।’
ফাইদাবাদের ফয়জুল্লাহদের বাসার কাছের মুদি দোকানি, স্থানীয় নরসুন্দর, প্রতিবেশী কেউ ফয়জুল্লাহকে চেনেন না বলে জানান। আজ ফয়জুল্লাহদের বাসা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এ বাসা থেকেই ১১ জুন ফয়জুল্লাহ নিখোঁজ হন জানিয়ে তাঁর বাবা ওমর ফারুক দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আহত শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর সিটিস্ক্যান এবং এক্স-রে করা হয়েছে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এম এস এম সারফুজ্জামান বলেন, রিপন চক্রবর্তী ভালো আছেন। সিটিস্ক্যান এবং এক্স-রে প্রতিবেদনে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর সেরে উঠতে একটু সময় লাগবে।
রিপন চক্রবর্তীর স্ত্রী মনিমালা রায় বলেন, সকালে রিপন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেন এবং কারা কুপিয়ে জখম করেছে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি রিপন।
শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজে সব ধরনের ক্লাস বন্ধ ছিল। সকালে উদ্বিগ্ন শিক্ষকেরা কলেজে জরুরি সভা করে পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।
পুলিশ বলেছে, আটকের পর ফয়জুল্লাহকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হামলার কারণ ও ফয়জুল্লাহর সহযোগীদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবও কাজ করছে। ইতিমধ্যে ফয়জুল্লাহর ঢাকার বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পাশাপাশি তাঁর ব্যবহৃত কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।
রাতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সারোয়ার হোসেন বলেন, কলেজশিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগির ফয়জুল্লাহকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের আটক করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে নিয়ে এসে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল বলেন, পুলিশ ফয়জুল্লাহকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তাঁর কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর