বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:০৭ অপরাহ্ণ, ২০ মার্চ ২০১৬
গ্রিস-মেসেডোনিয়া সীমান্তবর্তী ইদোমেনি শরণার্থী শিবির। গেল শীতের তীব্রতা কমে আসতেই বসন্তের আগমনী বৃষ্টিতে ভিজে গেছে শিবিরের সবকটি কাপড়ের তাবু। শিবিরের একেবারে দক্ষিণ কোনের একটি তাবুর সামনে হাতে একটা খাতা নিয়ে চুপটি করে বসে আছে শহরজাদ হাসান নামের আট বছর বয়সী একটি শিশু। মাত্র আঠেরো মাস আগেও শহরজাদ সিরিয়ার আলেপ্পোতে নিজের বড়িতে বাবা-মার কোলে আনন্দে থাকতো। কিন্তু আজ যুদ্ধ পরিস্থিতির বাস্তবতায় শহরজাদকে একটি সস্তা মার্কার কলম নিয়ে খাতায় আঁকতে হচ্ছে তার ভয়াল ভ্রমনের অভিজ্ঞতা।
কীভাবে রাতের অন্ধকারে সিরিয়া থেকে তাদের পালাতে হয় এবং কতটা বন্ধুর পথ অতিক্রম করে মেসেডোনিয়ার এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আসতে হয়েছে তার বর্ননা কোনো বয়স্ক মানুষের মুখে না শুনে শহরজাদের আঁকার খাতাটি দেখলেই হয়।১৮ মাসের ভ্রমনে যত অভিজ্ঞতা হয় শহরজাদের তার সবগুলোই নিজের ওই আঁকার খাতায় চিত্রিত করা হয়েছে। এটা এই সভ্যতার অভিশাপ যে, একটি শিশুকে আজ ফুল-প্রজাপতির ছবি না একে, আঁকতে হচ্ছে ট্যাংক-বিমানের মতো মানুষধ্বংসী অস্ত্রের ছবি। কারণ শহরজাদের মতো শিশুদের শৈশবের হাসি-কান্নার আনন্দটুকু কেড়ে নিয়েছে আধুনিক সভ্যতার ব্যবসাদার ক্রিয়ানকেরা। সিরিয়া থেকে ইউরোপে আসতে বিভিন্ন সময় অনেক সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে শহরজাদের পরিবারকে। সেই সংঘর্ষগুলোর কোনোটিতে দলের অন্যরা আহত হয়েছে, আবার তাদের পরিবারও আহত হয়েছে কয়েকবার। তবে আট বছরের এই শিশুর আঁকার খাতায় শুধু কষ্টকর ভ্রমনের দৃশ্যই নেই।
পাশাপাশি রয়েছে ইসলামিক স্টেট( আরবে দায়েশ নামে পরিচিত) যোদ্ধাদের হাতে নির্যাতন ও দুর্ভিক্ষের দৃশ্যপট।শহরজাদের আঁকার খাতার কিছু দৃশ্যপট যে কারও হৃদয় কষ্টে ভরিয়ে তুলতে পারে। যেমন ধরা যাক, আগেয়ান থেকে আসার পথে শরণার্থী বোঝাই নৌকাডুবে যাওয়ার দৃশ্যের কথাই। মাত্র আট বছর বয়সী একটি শিশু প্রত্যক্ষ করছে অনেকগুলো মানুষের মৃত্যু শুধু তাই নয়, সেই স্মৃতি সে বয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ মৃত্যুর স্মৃতি যে কতটা ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে শিশুমনে তা যেকোনো পাষাণ হৃদয়ের মানুষও বুঝতে পারবে। সিরিয়া থেকে প্রতিদিন গ্রিসের উদ্দেশ্যে যতজন মানুষ রওনা দেয়, তাদের মধ্যে মাত্র অর্ধেক মানুষ শেষমেষ পৌছুতে পারে। বর্তমানে প্রায় চল্লিশ হাজার শরণার্থী অস্ট্রিয়া এবং বলকার অঞ্চলগুলোর সীমান্তে আটকাবস্থায় আছেন। কারণ শরণার্থী প্রবেশে জার্মানির পর গ্রিস কঠোর অবস্থান নিলে সীমান্তগুলোতে অনেক শরণার্থীই আটকে যায়।
শহরজাদের পরিবার ছাড়াও আরও চোদ্দ হাজার মানুষ এই ইদোমেনি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সীমান্তের এই স্থানটি এতটাই কঠোর যে, অবৈধ উপায় দূরের কথা, বৃষ্টির কারণে বৈধ উপায়েই কিছুদিন ধরে কোনো শরণার্থী গ্রিসে প্রবেশ করতে পারছেন না। কাঁটাতাড়ের বেড়ার সামনে অপেক্ষমান মানুষের আহাজারিও বাদ যায়নি শহরজাদের চিত্রকর্ম থেকে। শিশু মনের সবটুকু সৌন্দর্য্যবোধও এই মানবিক কদর্যতাকে ঢাকতে পারেনি, কঠিন সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে প্রতিমুহূর্তে। তবু এই বাসযোগ্য পৃথিবীতে সংঘাত চলছে, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এক দেশ অরেক দেশকে হামলা করছে। ধর্মের নামে, কওমের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। কবে এই পৃথিবীর মানুষ শহরজাদের মতো শিশুদের বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়ার জন্য সমবেত চেষ্টা করবে।