বরগুনা: বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের একটি সদস্য পদ সর্বশেষ সংশোধিত আইন অনুযায়ী শূন্য ঘোষিত হলেও সে পদের অনুকূলে শপথ পাঠ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শপথ পাঠ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চরদুয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং মঠের খাল ওয়ার্ডের সদস্য পদটি আইন অনুযায়ী শূন্য হয়ে পড়ে। আর শূন্য এ পদের অনুকূলে আইনের সুস্পষ্ট নির্দেশনাকে লংঘন করেই ওই সদস্যকে শপথ পাঠ করিয়েছেন পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য কবীর মোল্লার সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২২ মার্চের ইউপি নির্বাচনের সময় জেল হাজতে থাকার কারনে নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পাঠ করতে ব্যর্থ হন তিনি। জেল হাজতে থাকার কারন উল্লেখ করে গত ২৬ মে শপথ পাঠের জন্যে তিনি পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। সেখানে কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ৩১ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে আবেদন করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবরে করা আবেদনের কোন জবাব না পেয়ে গত ২৩ জুন উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন (নং ৮২৫৯/১৬) করেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য কবীর মোল্লা। কবীর মোল্লার এ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে তার শপথ না করানোর কারন জানতে চেয়ে এবং ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর আবেদনটি নিস্পত্তির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা পেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ইশান আলী রেজা বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য ইউএনও পাথরঘাটাকে নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে কবীর মোল্লার প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য ছগির হোসেন জানান, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০১০ অনুযায়ী নির্বাচিত হলেও নির্বাচন পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পাঠে ব্যর্থ হলে তার পদ শূন্য ঘোষনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেনকে একটি অবহিতকরন নোটিশও পাঠান সাবেক ইউপি সদস্য ছগির হোসেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ১৯৮৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালার শপথ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় সরকারী কৌশুলী’র (জিপি) মতামত নিয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর বিষয়টি ভাবনায় রেখে সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত ইউপি সদস্য কবীর মোল্লার শপথ সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, ১৯৮৩ সালের আইনে যাই লেখা থাকুক না কেন সর্বশেষ ২০১০ সালের সর্বশেষ আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পাঠ না হলে ওই পদটি শূন্য বলেই বিবেচিত হবে। এ কারনে চরদুয়ানী ইউনিয়নের ৭নং মঠের খাল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের ওই পদটি শূন্য হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে এবং তাকে শপথ পাঠ করানোর বিষয়টি আইন অনুমোদন দেয় না বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে চরদুয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ফিরোজ বলেন, ওই ইউপি সদস্যের শপথ পাঠ করানো হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে শপথ অনুষ্ঠানের কোন বৈধ কাগজপত্র তিনি এখনও হাতে পাননি। তাছাড়া শপথ অনুষ্ঠানের কোন আমন্ত্রনও তিনি পাননি।
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসান তারিক পলাশ বলেন, ভুক্তভোগী কবীর মোল্লার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে শপথ পাঠ করানোর কোন নির্দেশনা নেই। সেখানে শপথ না পড়ানোর কারন জানতে চাওয়া হয়েছে মাত্র। পাশাপাশি আদেশে ৩০দিনের মধ্যে কবীর মোল্লার আবেদনটি নিস্পত্তির নির্দেশও দেয়া হয়েছিলো। অ্যাডভোকেট হাসান তারিক পলাশ আরও বলেন, নিস্পত্তির নির্দেশ মানে এই নয় যে তার শপথ পড়াতে হবে। নিস্পত্তি বলতে বোঝানো হয়েছে কেন তার আবেদন গ্রহন করা যাবে বা যাবে না সেই মর্মে জবাব দিয়ে এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো।