বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৪:২৫ অপরাহ্ণ, ২৭ অক্টোবর ২০১৬
বরিশাল: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে আবারো শুরু হয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় বখাটের ত্রাস। মঙ্গলবার গভীর রাতে তারা প্রায় ১২জন ছাত্রলীগ নেতাকে কলেজের ইন্টার্নী হোস্টেলসহ বিভিন্ন হলে গিয়ে বেধরক মারধর করে। এমনটাই অভিযোগ পাওয়া গেছে মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে।
তারা জানিয়েছে, হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ নামধারী নেতা এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানের ঘনিষ্ট সহচরী ফোরকান সিকদারের নেতৃত্বে কলেজের এবং বহিরাগত প্রায় অর্ধশতাধিক অনুসারী গভীর রাতে হলের রুম ভেঙ্গে আমাদের মারধর করে। কিন্তু ভয়ে কেউ কোন কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে ফোরকান সিকাদারের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা কলেজের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে গিয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দী ছাত্রলীগ নেতাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। যাতে কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাইদ, যুগ্ম সম্পাদক এবং ৪৩তম ব্যাচের মিজানুর রহমান সুজন, আনোয়ার হোসেন সৈকত, কামাল হোসেন, মোহাইমিনুল ইসলাম কৌশিক, ৪২তম ব্যাচের ফয়সাল হোসেন, সন্ধানীর সাবেক সভাপতি এবং সম্পাদক সুমন, নাদিম, পল্টনসহ বেশ কয়েকজনকে বেধরক মারধর করে। শুধু মারধরেই থমকে যাননি তারা। রাতভর আটকে রেখে করা অমানবিক নির্যাতন।
নির্যাতনের নেতৃত্ব দেওয়া ফোরকান সিকদার এক আওয়ামীলীগ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে চললেও মূলত সে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ানের ঘনিষ্ট সহচরী। তবে এর আগে সে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনেরও অনুসারী ছিলেন। আহতরা জানিয়েছেন, তারা ছাত্রলীগ করলেও এখন তেমন একটা সক্রিয় নয়। পড়া লেখা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকা হয়। এরপরেও ফোরকান কেন হামলা চালিয়েছে তার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
তারা আরো জানান, এর আগে সে বিভিন্ন সময় হলের রুম ঘন্টা খানিকের জন্য আমাদের কাছে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তা না দেওয়ার একটা কারণ হতে পারে। রুম না দেওয়া বিষয়ে আহতদের মধ্যে একজন জানান, ফোরকান তার বান্ধবীকে নিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ড, মদ এবং ইয়াবা সেবনের জন্য আমাদের কাছে রুম চাইলে আমার তা দিতে সহমত হইনা।
তবে অন্য একটি মাধ্যম জানিয়েছেন, ফোরকান যাদের মারধর এবং নির্যাতন করেছে তারা তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ ছিল একসময়। এর আগে ফোরকানসহ তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কলেজ ছাত্রলীগের প্রায় ৩০জন নেতাকর্মীরাকে আলাদা আলাদা ভাবে রাতভর নির্যাতন করেছিল। সেসময় পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এদিকে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ফোরকান যদি আসলেই ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বিশ^াসী হয়ে কাজ করে তাহলে সে কোন সময়ই ছাত্রলীগের অন্য নেতাকে মারধর, হামলা বা নির্যাতন করতে পারত না। এ কারণে আমাদের মনে হয় সে ছাত্রলীগ করছে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের কারণে।
অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে এসব বক্তব্য শোনার পর ফোরকানের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ এলাকার চিহ্নিত প্যাথেডিন এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফোরকান। রুবেলের ব্যবহৃত ইয়ামাহা কোম্পানীর আর১৫ সিরিজের মোটরসাইকেল নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। শুধু তাই নয় অনেকের ধারণা রুবেলের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন ফোরকান।
ফোরকানের এ সহযোগী রুবেল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনের অনুসারী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সহযোগী। ফোরকান সবসময় জসিম উদ্দিনের বিপরীতমূখী ছাত্ররাজনীতি করলেও সে পুরোপুরি ব্যালেন্স করে চলত জসিমের সাথে। যে বিষয়টি আদৌ জানা নেই ফোরকানের ছাত্র রাজনীতির মূল কেন্দ্র জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের।
তবে জানা গেছে, ফোরকান এবং কলেজ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা আলিম ফয়সালকে নিয়ে বিব্রত রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা। তারাও তাদের বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে নারাজি জানান।
সম্প্রতি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মধ্যে সড়কে ছাত্রলীগের দেয়াল তুলে দেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে নামলে জানা যায়, ছাত্রলীগ নামধারী ফোরকান সিকদার তার বান্ধবীকে নিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের রাস্তার এক কোনে বসে অশ্লীল কর্মকান্ড করছিল। কিন্তু বিষয়টি দেখতে পায় স্থানীয় এক যুবক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে ওই যুবককে মারধর করা হয় এবং তাকে ইভটিজার বলে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সূত্র ধরে কলেজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন সড়কে অযৌক্তিক ভাবে দেয়াল তুলে দেয় তারা। এতে তাদের সুবিধাও হয় অপ্রতুল।
বর্তমানে অশ্লীল কর্মকান্ডে কোন বাঁধা নেই এসব সুযোগ সন্ধানী নেতাদের। কেননা প্রতিদিন টহল পুলিশের যাতায়াত থাকলেও এখন আর সেখানে পুলিশের যাতায়াত নেই।
শুধু তাই নয় এনিয়ে বেশ সমস্যায় রয়েছেন কলেজের ছাত্রীরাও। কলেজ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা ফোরকানসহ বেশ কয়েকজনের অসহ্য কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ তারা ছাত্রলীগের যে নেতাদের মঙ্গলবার রাতভর মারধর করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, আসলাম শিক্ষা গ্রহনে, সাথে বেধড়ক মারধরও গ্রহল করালাম। এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনকে বলেও কোন লাভ নেই। তারা কিছুই করবে না।
তবে বিষয়টি নিয়ে কলেজ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাকে কল করা হলে তারা জানান, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে দেখা যাবে।