১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর শের-ই-বাংলা ফজলুল হক বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। এমনই একটা জন্মদিনের সংবাদ পরিবেশন করেছে দেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলো।
কেবল মাত্র জন্মদিন ও মৃত্যু দিনের খবর প্রকাশ করে পত্রিকার ভিতরের পাতায় সংবাদ পরিবেশন করে পত্রিকাগুলো ভারতবর্ষ তথা পাকিস্তান জন্ম সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস জানানোর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলছে বছরের পর বছর। কোন কোন পত্রিকা আবার ভুল তথ্য তুলে ধরছে।
শের-ই- বাংলা এ কে ফজলুল হকের দীর্ঘ জীবনের নানা দিকের কোন একটি দিকের উল্লেখ না করা আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করারই প্রয়াস।
১৯০৬ সালে লন্ডনে আগা খানের নেতৃত্বে মুসলিম লিগের জন্মকালীন সময় থেকে ভারতীয় মুসলিম লিগের এই নেতা একাধিক বার মুসলিম লিগ ত্যাগ করেছেনে। তার নাম মুসলিম লিগের লাহোর সম্মেলনে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ এর প্রস্তাবক হিসাবে প্রচলিত। অথচ সেই প্রস্তাবে পাকিস্তান নামের কোন শব্দ পাওয়া যায় না। ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চের সেই প্রস্তাব নিম্নরূপ:
“That geographically contiguous units are demarcated into regions which should be constituted, with such territorial readjustments as may be necessary that the areas in which the Muslims are numerically in a majority as in the North Western and Eastern Zones of (British) India should be grouped to constitute ‘independent states’ in which the constituent units should be autonomous and sovereign .
মুসলিম লিগের এই প্রস্তাবের লেখক পাঞ্জাবের চৌধুরী জাফরউল্লাহ আর প্রস্তাবটি পাঠ করেন এ কে ফজলুল হক। তিনি তখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলার নির্বাচনে মুসলিম লিগ ত্যাগ করে নবগঠিত কৃষক প্রজা পার্টি নেতা হিসাবে বাংলার মুসলিম লিগের নেতা খাজা নাজিমউদ্দীনকে তার নিজ জমিদারি এলাকা বর্তমানের পটুয়াখালীতে সাত হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। নিজে আলাদা দল গঠনের মূল কারণ ছিল তখনকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ তার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তথা জমিদারি উচ্ছেদের দাবি ও মহাজনি সুদ বাতিলের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানো।
এ কারণে আলাদা দলে নির্বাচনে ২৫০ টি আসনের মধ্যে শের ই বাংলার পার্টি ৩৬ টি আসনে জয়লাভ করে এবং প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগ ও কংগ্রেসকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বাধার সৃষ্টি করে ।
পরবর্তীতে মুসলিম লিগ ও কংগ্রেসের সমর্থনে বাংলার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন । বাংলার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরাতন BENGEL Agricultural institution ঢাকায় গড়ে তোলেন যা আজকে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সময়কালে মুসলিম লিগ একমাত্র বাংলায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণার ফলে কংগ্রেস তার বিরোধিতা করে বিভিন্ন ৮টি প্রদেশে থেকে পদত্যাগ করে। কিন্তু বাংলায় ফজলুল হক ক্ষমতায় থাকলেন মুসলিম লীগের সিদ্ধান্তে কারণ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লিগে তিনি পুনরায় যোগদান করেছিলেন । যুদ্ধে মুসলিম লিগ ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেছিল।
১৯৪২ সালে এই নেতা সর্বশেষ মুসলিম লিগ ত্যাগ করেন। এর প্রধান কারণ ছিল বাংলা থেকে ব্রিটিশ সৈন্যদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানালে সেই সময়ের অন্য সব নেতারা তার বিরোধিতা করেন।
তিনি মুসলিম লিগ ত্যাগ করলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করে খাজা নাজিমউদ্দীনকে প্রধানমন্ত্রী ও সোহরাওয়ার্দীকে সরবরাহ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিণতিতে ১৯৪৩ সালের পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত দুর্ভিক্ষে এক কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। ১৯৪২ সালে মুসলিম লিগ ত্যাগ করার পরে তার সাথে মুসলিম লিগের চিরস্থায়ী শত্রুতা সৃষ্টি হয়। যে কারণে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির সময় দর্শক সারিতে থাকা ছাড়া কোন অবস্থা ছিল না।
পাকিস্তান জন্মের সময়ে খাজা নাজিমউদ্দীন, জিন্নাহ তথা ব্রিটিশদের কাছে আস্থাভাজন থাকায় পূর্বপাকিস্তানে একে ফজলুল হকের আগমনে বাধা দেয় এই বলে যে তিনি পাকিস্তানবিরোধী। যা সত্য। ঢাকার সর্দারদের সমর্থনে ১৯৫১ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরত আসেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে এই ভূখণ্ডের মানুষের কাছে ফিরে আসেন ফজলুল হক এবং তার নেতৃত্বে চার দলীয় যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। তার নিজ দল জোটে সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও সেই সময় তাকেই প্রধানমন্ত্রী বানানো হয় জোটের নির্বাচন পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে।
ঝালকাঠির খবর, টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর