বরিশাল: ক্ষমতাসীন আ’লীগে শাসনামলে যুবলীগ নেতা শাহীন সিকদার ও তার ভাই বিএনপি নেতা মোমেন সিকদার কত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমন গুঞ্জন প্রায়ই শোনা যায়। বরিশালের অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কাজগুলো ক্ষমতার বলে বাগিয়ে নিয়ে করার উদাহরণও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের ছোট ভাই মাইনুল ইসলাম ওরফে মনু সিকদার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আসেনি আলোচনায়। তবে বিষয়টি স্থানীয় অনেকে জানলেও বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শাহীন সিকদারের ভাই বলে কেউ মুখ খোলেনি। তাছাড়া আরেক ভাই মোমেন সিকদারও বিরোধীদল বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা।
অবশ্য তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। এমতাবস্থায় রোববার মনু সিকদার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ফেন্সিডিলসহ আটক হওয়ার পর ফাঁস হয়ে যায় অন্তর্ধান রহস্য। প্রশ্ন ওঠে রাতারাতি তিন ভাইয়ের কোটিপতি বনে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। ডিবির দায়ের করা মামলায় সোমবার বরিশাল আদালত মনু সিকদারকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। কিন্তু আটকের পরপর খবর যাতে মিডিয়ায় স্থান না পায় সেই বিষয়টি লুকোচাপা রাখতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেণ শাহীন সিকদার ও মোমেন সিকদার। অবশ্য এতে তারা সফলও হয়েছেন বলে শোনা যায়।
অর্থের মাধ্যমে অধিকাংশ মিডিয়া ম্যানেজ হয়ে যাওয়ায় সংবাদটি প্রকাশই পায়নি! আবার কেউ দায়সারাভাবে প্রকাশ করে পাঠককে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর গেলাতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যম বরিশালটাইমস পত্রিকা ব্যতিক্রমধর্মী সংবাদ প্রকাশ করায় অনেকেই সংবাদটি পড়ে দিয়েছেন বাহবা। এমতাবস্থায় সোমবার বরিশাল নগরীতে এমন আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো যুবলীগ নেতার ভাইয়ের গ্রেফতার প্রসঙ্গ। যে কারণে ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতারের পরপরই ছাড়িয়ে নেয়া এবং মিডিয়া ম্যানেজে বড় দুইভাই শুরু করেণ দৌঁড়ঝাপ। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, অবশেষে মাদক মামলায়ই কারাগারে যেতে হয়েছে মনু সিকদারকে। সেই সাথে তার সহযোগী জাহাঙ্গীর হোসেন হেনাকেও জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মনু সিকদারের এই গ্রেফতার তার দুই ভাই সরকার এবং বিরোধী দলের দায়িত্বশীল নেতা হওয়ায় রাজনীতির মাঠে চরম ইমেজ সঙ্কটে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মনু সিকদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বরিশাল মহামেডান স্পোটিং ক্লাবে এই মাদকের ব্যবসা আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু করেণ। ঠিকাদারির পাশাপাশি এই বাণিজ্যে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। অন্যদিকে ভাই বিএনপি নেতা মোনেম সিকদার ও শাহীন সিকদারও সরকারি অফিসগুলোতে হানা দিয়ে বাগিয়ে নেন বড় বড় টেন্ডার কাজ।
যার বদৌলতে তারাও সময়ের ব্যবধানে টাকার মালিক হয়ে ওঠেন। কিন্তু ছোট ভাইয়ের অপরাধ জগতে জড়িয়ে পরার বিষয়ে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেণনি। যার দরুণ মাইনুল ইসলাম সিকদার ওরফে মনু সিকদার ক্লাবটিতে সকলের কাছে ফেন্সি মনু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেণ। এই মাদক ব্যবসায়ির ঘনিষ্ট এক বন্ধু জানিয়েছেন, যশোর থেকে প্রায়ই ক্লাবে বড় বড় মাদকের চালান আনতেন মনু সিকদার। যার ধারাবাহিকতায় রোববার ডিবি পুলিশের উদ্ধার করা ফেন্সিডিলগুলোও চলে আসে।
কিন্তু বিধিবাম। মনু সিকদার সম্পর্কে সবকিছু জেনেশুনেই ওৎ পেতে ছিলো গোয়েন্দা পুলিশ। ফলে মাদকের চালান আসার পরপরই ক্লাবটিতে অভিযান চালিয়ে সফলতা পায়। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, মনু সিকদার ইয়াবা-ফেন্সিডিল থেকে শুরু করে সব ধরণের মাদক বিক্রির সাথেই জড়িত।
একই সাথে আটক তার সহযোগী জাহাঙ্গীর হোসেন হেনাও এই মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। ডিবি পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আটকের পর মনু সিকদারকে ছাড়িয়ে নিতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুপারিশ আসে। কিন্তু মাদকের বিষয়ে পুলিশ হার্ডলাইনে থাকায় কোন আপোষ রফার সুযোগ দেয়া হয়নি। মূলত ডিবি পুলিশের কাছ থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরার পরপরই সংবাদ ঠেকাতে মিডিয়ার দুয়ারে কড়া নাড়েন বড় দুই ভাই।
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর