বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে নগরী ক্রমশই বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। গত ২৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকায় সিটি কর্পোরেশনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। উন্নয়ন বা পরিচ্ছন্নতা কাজকর্ম না হওয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে পুরো নগরজুড়ে।
মহানগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা ১ হাজার ২শ’ পরিচ্ছন্নতাকর্মী তাদের কাজকর্ম বন্ধ রেখেছেন। ফলে শনিবার (০১ এপ্রিল) পর্যন্ত টানা ৬দিন ধরে নগরের বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্য এলাকা থেকে কোনো বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে না।
বর্জ্য অপসারণ বন্ধ থাকায় ছোট-বড় সব সড়কেই জমেছে ময়লার স্তুপ। দূর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে ৮ লাখ মানুষের বসবাস বরিশাল নগরী। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে বেশিরভাগ সময়ে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে। পাশপাশি নগরবাসী স্বাস্থ্যহানীও ঘটতে চলছে।
শনিবার বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম এলাকা সদর রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, হাসপাতাল রোড, কালীবাড়ি রোড, আলেকান্দা এলাকা, পোর্ট রোড, বগুড়া রোড, বটতলা রোড, ফকিরবাড়ি রোডসহ ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কের ওপর ময়লার ভাগার পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকায় ময়লা এমনভাবে জমা হয়েছে যে- চলাচলের সড়ক কিংবা পায়ে হাঁটা ফুটপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।’
বিসিসি’র পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা জানান- ৫ মাসের বকেয়া বেতন ও ৩২ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড না দেওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ৫শ’ ৪২ জন স্টাফ ও তিন মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া না পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার অনিয়মিত কর্মচারী আন্দোলন করছেন। ফলে পরিচ্ছন্নতা বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।
বেতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর ময়লা অপসারণ না করায় সমস্যা হয়েছে। আন্দোলন বন্ধ না হলে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।”
নগরীর গির্জা মহল্লার ব্যবসায়ি নুরুল আমিন বরিশালটাইমসকে বলেন- রাস্তাঘাটে ময়লা থাকায় দুর্গন্ধে তেমন ক্রেতা সমাগম নেই। ব্যবসায়িক জোন চকবাজার ও কাঠপট্টি চিত্রও একই।’
এদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গত বুধবার (২৯ মার্চ) বিসিসি’র মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে আইনী নোটিশ দিয়েছিলেন একজন আইনজীবী।’
বেসরকারি সংগঠন স্কোপের নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন- বরিশাল নগরী ময়লা-আর্বজনা অপসারিত না হওয়ায় জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। পরিবেশ দূষণের ফলে সর্বসাধারণের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।’
কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ও প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। তারা শুক্রবার (৩১ মার্চ) রাতে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা বলেন- করপোরেশনের আয় বেড়েছে। বকেয়া বেতন পরিশোধে মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। যে কারণে তাদের প্রতীকী আন্দোলন আজ লাগাতারে রুপ নিয়েছে, নগরবাসীকে ফেলেছে বিপদে।”
এদিকে শনিবার বেলা তিনটায় মেয়র আহসান হাবিব কামাল কালুশাহ সড়কস্থ তার বাসায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিসয় সভা করে শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা কাজে ফিরলে বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।’
তবে রোববারের মধ্যে কাজে না ফিরলে ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। পাশাপাশি নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় ময়লা অপসারণের কথা জানিয়েছেন।”
শিরোনামবরিশালের খবর