বরিশাল: বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আবাসিক হল নেই। পরিবহনসংকটও তীব্র। এ ছাড়া নানা সমস্যায় জর্জরিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। ব্যাহত হচ্ছে তাঁদের পড়াশোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় ভাড়াবাড়িতে দেশের ৩৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি যাত্রা শুরু করে। ব্যবস্থাপনা, বিপণন, ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালে কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে কর্ণকাঠিতে ৫০ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের আওতায় ১৮টি বিষয়ের ওপর পড়াশোনা হয়।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ৭৫০ আসনের তিনটি হলের (দুটি ছেলেদের, একটি মেয়েদের) নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৮ মাসের মধ্যে এসব নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু আজও তা শেষ হয়নি। এই তিনটি হলের ৭৫০ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।
এ ছাড়া পরিবহনসংকট প্রকট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চারটি মিনিবাস এবং বিআরটিসি থেকে ছয়টি দ্বিতল বাস ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার কাজ চলছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় ১০টি বাস কিছুই নয়। গাদাগাদি করে এসব বাসে তাঁদের চলাচল করতে হয়। বাসে জায়গা হয় না বলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে অন্যান্য গণপরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে দৈনিক ৫০-৬০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়।
এ ছাড়া গ্রন্থাগার, গবেষণাগারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও কম। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ভবন, ক্যানটিনের জন্য নির্ধারিত ভবনের কাজও প্রায় তিন বছরে শেষ হয়নি।খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিচর্চা ও বিনোদনের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুন্নাহার বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। আবাসনব্যবস্থা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বরিশাল শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার মেসে থাকতে হচ্ছে। মেসে ভোগান্তির কূলকিনারা নেই। পানিসংকটসহ অন্যান্য যেকোনো সমস্যার কথা বাড়ির মালিককে বলতে গেলে তিনি হুটহাট বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। আবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য বাসের জন্য দীর্ঘ সময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। বাসে জায়গাও থাকে না। আবার ক্লাস শেষে মেসে ফিরতে দেড় ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।’
একই বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন ও পুষ্পিতা পাঁড় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সুবিধাই এখানে নেই। চারদিকে শুধু নেই আর নেই। তাঁরা খুবই অমানবিক একটা পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া উপায় কী! এখন তো আর কোথাও যেতে পারবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নগরীর আমতলা এলাকার একটি মেসে থাকেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে নয়টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস থাকে না। আমার ক্লাস সাড়ে নয়টার পর। তাই আমাকে প্রতিদিন ৭০-৮০ টাকা খরচ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। হলে থাকলে পরিবহন খাতে আমার কোনো অর্থ ব্যয় হতো না।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রুমান বলেন, আবাসনব্যবস্থা নেই। গ্রন্থাগার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে রাস্তাঘাট নেই। এখানে আসলে পড়াশোনার মতো কোনো পরিবেশই এখনো গড়ে ওঠেনি।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ও শের-ই-বাংলা নামে দুটি ছাত্র হল এবং শেখ হাসিনা নামে একটি ছাত্রী হলের নির্মাণকাজের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর এসব হলের নির্মাণকাজ শেষ করে হস্তান্তরের সময়সীমা থাকলেও তা হয়নি। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানটিন, গ্রন্থাগার ভবন ও উপাচার্যের আবাসিক ভবনের কাজ শুরু হয়। এই তিনটি স্থাপনার কাজও সম্পন্ন হয়নি।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তিনটি হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। সংযোগ সড়কের কাজও শুরু হবে। এ ছাড়া ক্যাফেটেরিয়া, গ্রন্থাগার ও উপাচার্যের বাসভবনের কাজও এগিয়ে চলছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হবে।’ তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণ সমস্যার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঠিকাদারেরও গাফিলতি ছিল।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘আশা করি, আগামী মাসে (অক্টোবর) এসব হল উদ্বোধন হয়ে যাবে। ৭৫০ জন ধারণক্ষমতার তিনটি হলে অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। এরপরও সমস্যা থাকবে। নতুন আরেকটি হল প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। সেটি নির্মাণ সময়সাপেক্ষ।’ পরিবহনসংকটের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘হলগুলো চালু হলে পরিবহনসংকট আশা করি থাকবে না। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি বাসমালিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর আশ্বাস দিয়েছেন।’ সূত্র প্রথম আলো