২০০৪ সালের ঘটনা, ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ুয়া ছেলেটি, প্রতিদিনের মতো স্কুলে গিয়ে, শুনতে পেল তার প্রিয় বন্ধুটিকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে কারণ, স্কুল ড্রেস না পরে আসা। ঘটনাটি শুনে খুবই মন খারাপ হলো ছোট্ট ছেলেটির। ছেলেটির প্রিয় বন্ধুটি স্কুল ড্রেস কিনতে পারেনি বলেই এই অবস্থা। আসলে বন্ধুটির বাবা সামান্য দিনমুজুর। তাই তিনি ছেলেটিকে স্কুল ড্রেস কিনে দিতে পারেননি। তবুও একটা উপায় তো বের করতে হবে, যেমন চিন্তা তেমনি কাজ, অনেক ভেবে চিন্তে উপায় একটা বের হলো। নিজের মাটির ব্যাংকে জমানোর টাকা দিয়ে বন্ধুটিকে স্কুল ড্রেস কিনে সহযোগিতা করলো ছেলেটি যা ছিল নিজের টিফিনের টাকা থেকে বাঁচানো। ছোটবেলা থেকেই অসহায় ও গরীব শিশুদের জন্য কাজ করার অধীর আগ্রহ ছিলো এই ছেলেটির ।
এর পরে ঘটনা একটু অন্য রকম, ২০০৪ সালে, সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে বরিশাল জেলার শিশু প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ছেলেটি যেখানে উপস্থিত ছিল সারা দেশের প্রায় ৮০০ শিশু। জীবনে প্রথম ঢাকা আসার অভিজ্ঞতা। শিশুদের হয়ে কাজ করা, শিশুদের নিয়ে কাজ করা, তাদের অধিকারের কথাগুলো বলায় আগ্রহী, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, একক অভিনয়, বিতর্ক, বাংলা পঠন, রচনা প্রতিযোগিতা ও শিশু নেতা হিসাবে পরিচিত ছেলেটির নাম মোঃ সজীব খন্দকার (জুনায়েদ)। সবাই তাকে সজীব নামেই ডাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে ৪.৮০ পেয়ে ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। বর্তমানে বরিশাল ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষে পড়াশুনা করছে এবং শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে কাজ করছে, বিশ্বদ্যিালয়ের জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এ।
৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ‘বিকল্প শিশু চিন্তা‘ সংগঠনের মাধ্যমে শিশুদের জন্য কাজ করা শুরু করে সজীব। বরিশালের শিশুদের অধিকার উন্নয়নে কাজ করতে ভালো লাগতো তার, এই সময়েই তিনি দুইজন গরীব ও অসহায় শিশুকে পড়াশুনা করানোর দায়িত্ব নেন। এরপর শুরু হলো তার পথচলা, ২০০৬ সালে বরিশাল জেলার ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) বরিশাল জেলা কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ, পরবর্তী পর্যায়ে ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে (এনসিটিএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।
ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) এর মাধ্যমে সাংবাদিকতার দিকে প্রথম অগ্রযাত্রা হয় তার। । পরবর্তীতে(এনসিটিএফ এর সদস্য হিসাবে) সেভ দ্য চিলড্রেন ও প্রেস ইনস্টিটিউট মাধ্যমে শিশু সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর থেকে সাংবাদিকতার প্রতি ঝুঁকে বশে সজীব। শিশু সাংবাদিক হিসাবে শুরু হয় তার কর্মকান্ড সে এনসিটিএফ ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘শিশু বুলি‘তে লেখা শুরু করে, পরবর্তী পর্যায়ে বরিশালের দৈনিক সত্য সংবাদের সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান শিশুদের নিয়ে লেখালেখির দায়িত্ব দেয় তাকে। ফলশ্র“তিতে সজীব ২০০৯ সালে ইউনিসেফ কর্তৃক আয়োজিত মিনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড প্রিন্টিং প্রতিবেদনে-১৮ নীচে ক্যাটাগরিতে সারা বাংলাদেশে থেকে ২য় স্থানে দখল করে নেয়। ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নগদ ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার টাকা) ও ক্রেস্ট তুলে দেয় ইউনিসেফ’র বাংলাদেশের প্রধান তার হাতে। শিশু অধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতনের কথা সবই সজীব তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে আনার চেষ্টা করে।
বর্তমানে দৈনিক সত্য সংবাদের সাংবাদিক, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্ক ফোর্সে (এনসিটিএফ) সাথে কাজ করছে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার হিসাবে- প্লান ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশের হয়ে। কাজের অংশ হিসাবে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠী জেলার এনসিটিএফ কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে সজীব। অন্যদিকে আগস্ট, ২০১৩ ‘চষধহহবফ চধৎবহঃযড়ড়ফ ঋবফবৎধঃরড়হ ঝড়ঁঃয অংরধ জবমরড়হধষ ঙভভরপব (ওচচঋ ঝঅজঙ)’ এর আয়োজনে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) এর সহযোগিতায় ৫ দিনের ইয়ুথ কনসালটেশন প্রশিক্ষণে ব্যাংকক যান তিনি। প্রশিক্ষণে সজীব যুব সাংবাদিক হিসাবে ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া এফপিএবি এর যুব সংসদের স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে সজীব। । পড়াশুনা শেষ করে একজন বড় মাপের সাংবাদিক হতে চান সজীব এবং সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারে ৭ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে সজীব সবচেয়ে ছোট কিন্তু ছোট হলেও তার দায়িত্বটা ছিলো অনেক বড়। ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর অনেক ভেঙে পড়েছিল সজীব নিজের পড়াশুনা খরচ নিজেই জোগানো কষ্টকর ছিল তার জন্য।
যারা তাকে সহযোগিতা করেছিল সেই সময়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেনি সজীব। এই তালিকায় আছেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা পঙ্কজ রায় চৌধুরী, সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, সেভ দ্য চিলড্রেনের সুলতান মাহমুদ, মীর রেজাউল করিম, আবু জাফর, প্লান-ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ফারুক আলম খান এফপিএবি হেলী রফিকসহ সবাই।
সজীব জানায় বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে ভাবনা খুবই কম মানুষ করে, আমি চাই দেশের সর্বস্তরের শিশুদের নিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তন করতে। যেখানে একটি শিশু তার অধিকার বঞ্চিত থাকবেনা কারণ শিশুরা শুধু ভবিষ্যৎ নয়, তারা বর্তমানও। সজীবের ঝুলিতে আছে, জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিযোগিতার মোট ৩৮ সনদপত্র, ক্রেস্ট, বইসহ নানা পুরস্কার। সজীব বলেন, একটি মোমবাতি যেমন সারা বিশ্বকে আলোকিত করতে পারে, তেমনি একটি শিশু একটি বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। সব শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বদলে দেবো এই পৃথিবীকে। আজকে আমি যা হয়েছি আমার সংগঠন (এনসিটিএফ) এর মাধ্যমে। আরো বলেন, স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি হয়তো বা একদিন জাতিসংঘের মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। সজীব এখন চায় বর্তমান বিশ্বকে তরুনদের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে আর যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের কে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা পাশাপাশি তরুনদের নিয়ে জাতিসংঘে যাতে একটি বিশ্ব শান্তি ও তরুন নেতৃত্বে অংশ গ্রহন ভিত্তিক একটি অধিবেশন ব্যবস্থা করা যায় তার জন্য বাংলাদেশে তরুনদের পক্ষ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন । বাংলাদেশের তরুনদের বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসাবে চিহিৃত করতে চায়।
আর কোন শিশু অনাহারে থাকবেনা, থাকবেনা পথে।। গত ২১-২৪ শে নভেম্বর ২০১৪ অনুষ্ঠিতব্য সার্ক পিপলস্ সামিটে যুব সাংবাদিক হিসাবে নেপালে একটি কর্ম শালায় অংশগ্রহন করে। যেখানে বাংলাদেশের শিশু ও তরুনদের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ও কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যা আগামী বাংলাদেশে তরুনদের অংশ গ্রহনের সুযোগ ও বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের তরুনদের অবস্থান তুলে ধরা হয়। [গত ২১-২৪ শে নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সার্ক পিপলস্ সামিটে যুব সাংবাদিক হিসাবে নেপালে একটি কর্ম শালায় অংশগ্রহন করে। যেখানে বাংলাদেশের শিশু ও তরুনদের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ও কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন।]
যা আগামী বাংলাদেশে তরুনদের অংশ গ্রহনের সুযোগ ও বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের তরুনদের অবস্থান তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকারকে শিশুদের উন্নয়নের জন্য সংসদে হয়তো বা একটি বিশেষ অধিবেশন ব্যবস্থা করতে হবে আর সাংবাদিক হিসাবে তা লেখনীর মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন তিনি এই আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন সজীব।
পাশাপাশি সজীব মনে করেন, এনসিটিএফ এর ইয়ুথ ভলান্টিয়ার হিসেবে, নিজে যেমন সচেতন হয়েছে এবং প্লান ইন্টারন্যাশনাল এর বিভিন্ন সহযোগিতা প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশের শিশু ও তরুণদের অবস্থান তুলে ধরতে সহযোগিতা করেছে। যা বিশ্বকে বাংলাদেশের শিশু কিশোররা পিছিয়ে না পড়ে।
সজীব। বড় হয়ে বিবিসি ওয়াল্ডের সাংবাদিকতা করার ইচ্ছা সজীবের।
বর্তমানে সজীব ইয়ূথ ভয়েস নামে একটি তরুণদের নিয়ে সংগঠন এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া তরুণদের অধিকার, বিশ্বে সমমূল্যায়ন, সমান অংশগ্রহণের, উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে, তার ইয়ূথ ভয়েসের মূল শ্লেগান, তরুণদের জন্য ভালোবাসা। আর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের যুব বান্ধব দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। বিশ্বের কাছে তুলে ধরা, বাংলাদেশের তরুণরা সুযোগ পেলে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে বিশ্বকে এগিয়ে নিতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে বেকার মুক্ত দেশ। বিশ্ব শান্তির, রোল মডেল হতে পারে আমাদের বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বেকারত্বকে যাদুঘরে পাঠানো হবে। এখন সজীবের ইয়ূথ ভয়েস মূল লক্ষ্য। আর বাংলাদেশই হবে বিশ্ব শান্তির যোগ্য উদাহরণ।
বাংলাদেশকে জঙ্গি মৌলবাদ, মাদকমুক্ত নিজ দেশ গড়া। স্বপ্নওয়ালা এই মানুষটি, এখন স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায় তাইতো এখন ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’