বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:৩৭ অপরাহ্ণ, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
‘তোমরা যেখানে সাধ সাধ চলে যাও-আমি এই বাংলার পাড়ে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে, দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে…।’ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের মত প্রকৃতি যাদের নিবিড়ভাবে টানে তারা তো হারিয়ে যাবেনই, ডুবে যাবেন, বলবেন ‘তোমরা যেখানে সাধ সাধ চলে যাও। আর যাদের জীবিকার কঠিন বাস্তবতায় অথবা প্রযুক্তির দৌরত্ম্যে সময় হয়ে ওঠে না, তারা বলবেন দেখা হয় নায় চোক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া…।’
ঝালকাঠির দখিন জনপদ বঙ্গপসাগর থেকে মাত্র শত কিলোমিটার নিকটবর্তী বিশখালি নদীর চরে এমন প্রকৃতির নৈসর্গ সাজিয়েছে ছইলার চর। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সঙ্কট। তবু সেই সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই ছইলার চর পর্যাটকের মিলনা মেলায় পরিনত হচ্ছে। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিশখালি নদীতে ৪১ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এক বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছইলা গাছ। আর ছইলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ নদী চরের নামকরণ করা হয়েছে ছইলার চর।
বর্ষায় জোয়ারের পানিতে পুরো চর ডুবে যায়। ভাটায় নেমে যায় পানি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মত। লাখ ছইলা গাছে বেঁধেছে পাখিরা নীড়। শালিক, ডাহুক আর বকের সারি। ছইলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজি সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঘেরা। তাই পাখির কিচিরমিচির ডাক সব সময়। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শরীফ মুহম্মদ ফয়েজুল আলম বলেন, ২০১৫ সালে ছইলারচর স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে চিিহ্নত করা হয়েছে।
এখানে পর্যাটকদের জন্য বাথরুম, বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি গভীর নলকূক এবং ছোট্ট পরিসরে একটি পাকা একটি খোলা কক্ষ নির্মান করা হয়েছে। কাঁঠালিয়া প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি উপজেলা সুজন সম্পাদক ফারুক হোসেন খান বরিশালটাইমসকে বলেন, পর্যটন স্পট ছইলারচরটি অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হচ্ছে।
প্রতি বছর শীতের সময় পর্যটকদের ভীরে মুখরিত থাকে এ স্থানটি। দূর-দূরান্ত থেকে এ মৌসুমে এখানে ৩ থেকে ৪টি করে পিকনিকের দল আসে। কিন্তু সুযোগাযোগ এখনও তৈরি হয় নি। ট্রলার বা নৌকা ছাড়া এখানে আসার উপায় নেই। তৈরি করা হয়নি ঘাট। তবে সরকারের পৃষ্ঠপোশকতা পেলে এ স্পটটি দক্ষিণাঞ্চলে মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে বলে মনে করছেন সাংবাদিক ফারুক হোসেন খান।’
সম্প্রতি এ ছইলা চরে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পিকনিকে আসা শিক্ষক এনামুল হোসেন বরিশালটাইমসকে বলেন, হৈ হুল্লা ও নাচ গানে বনভোজনের প্রকৃত সাধ পেলাম এখানে। এত মনোরম পরিবেশে পর্যটনের জন্য এর চেয়ে আর ভাল স্থান হয় না। কিন্তু স্পটটি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থার। নদী থেকে উঠা নামার সিড়ি কিংবা ঘাট, বিদ্যুৎ, টলঘর, রেষ্ট হাউজ, দোকানপাট এবং সড়ক যোগাযোগ সুগম করলে এটি পর্যটন আয়ের উৎস হতে পারে, বলেন ওই শিক্ষক।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুল হক চৌধুরী বরিশালটাইমসকে বলেন, ছইলার চরটি পর্যটন সম্ভাবনার হাতছনি। এখানে পর্যাটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যেই পর্যাটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।’’