সরকারি নিয়ম অমান্য: ইচ্ছেমত অফিসে আসেন সরকারি কর্মকর্তারা
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা বেজে ১৩ মিনিট। বেতাগী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম অলিউল ইসলামের অফিসে তালা। অফিস সহকারী মো. ফারুক হোসেন পাশের একটি কক্ষে বসা। অফিসে কর্মকর্তা কি এসেছেন, জানতে চাইলে সহজভাবেই ফারুক বলেন, ‘না। স্যার এখনও আসেননি।
এসে পরবে। স্যার পাশের জেলা পটুয়াখালী থেকে এসে প্রতিদিন অফিস করেন। তাই আসতে একটু দেরি হয়।’ এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি এক মুক্তিযোদ্ধার ঘরের ল্যে-আউটের কাজ দেখে অফিসে ঢুকবো। আসতে ১ ঘন্টা দেরি হতে পারে।’
এ চিত্র বরগুনার বেতাগী উপজেলার অধিকাংশ সরকারি অফিসের। এখানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত সময়ে অফিস করছেন না। অনেকে আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করছেন। এমন অভিযোগ অনেক দিনের। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি পূরণে গত বুধবার (২৪ আগস্ট) থেকে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর অফিস সময়সূচি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ কর হয়। সোমবার (২২ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সকাল সোয়া ৯টায় উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাসের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর কক্ষ খোলা। অথচ তিনি তখনো অফিসে আসেন নি। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কোথায় জানতে চাইলে অফিস সহকারী জানান স্যার একটু পরে আসবেন। মোবাইল ফোনে মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘আমার অফিসে আসতে ৫-১০ মিনিট সময় লাগবে। আপনি বসুন।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে গিয়েও দেখা গেলো একই চিত্র। তাঁর কক্ষও খোলা। অথচ সকাল সাড়ে ৯টায়ও মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আব্দুল গাফফার অফিসে আসেন নি। তাঁর কক্ষে দু’জন অফিস সহকারী বসা। তাঁরা জানান স্যার একটু পরেই আসবেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি উপজেলা পরিষদের পঞ্চম তলায়। অনেকটা নিরিবিলি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসে গিয়ে দেখা গেছে ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের কক্ষটি তালাবদ্ধ। তিনি কখন আসবেন জানতে চাইলে অফিস সহাকারী কবির হোসেন বলেন, স্কুল পরিদর্শনের কাজে স্যারের বিবিচিনি যাবার কথা। পরিদর্শন শেষে তিনি অফিসে আসবেন।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অবস্থান জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেন নি। উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস কক্ষের তালা সাড়ে ৯টায়ও খোলা হয়নি। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি ট্রেনিংয়ে ঢাকা আছি। রোববার ফিরবো’
সকাল ১০টায় উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অফিসে গিয়ে তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়। তিনি অফিসে এসেছেন কিনা, জানতে চাইলে পাশের কক্ষের থাকা দু’জন প্রশিক্ষক বলেন, ‘না। ম্যাডাম এখনও আসেননি। উপজেলা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা মোবাইল ফোনে জানান, তিনি মিটিংয়ের কাজে তালতলিতে আছেন।
সকাল সোয়া ১০টায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকেও তাঁর অফিসে দেখা যায়নি। তাঁর অফিস সহকারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্যার বরিশাল ট্রেনিং এ গেছেন।’
সকাল পৌনে ১০টায় অফিসে আসেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. গোলাম মোস্তফা। এসময় এ প্রতিবেদকের সাথে সিঁড়িতে তাঁর দেখা হয়। দেরি করে অফিসে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটা সব সময় হয় না। একটা অসুবিধার কারণে আজ দেরি হয়ে গেছে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৮টা থেকে ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ অফিসে সকাল ১০টার আগে কর্মকর্তারা আসেন না। এ সুযোগ নিয়ে অধস্তন কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে অফিসে আসেন।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, উপজেলা পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিস করার নির্দেশ দেওয়া আছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা, বিভাগের খবর