বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:৪০ অপরাহ্ণ, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা:: পথ একটাই। মাঝে ৩ ফিটের একটা ছোট্ট ইটের দেয়াল। এই দেয়াল জমির সিমানা নির্ধারণ করলেও মনের দেয়ালে রেখা টানেনি। একই পথ দিয়ে মুসলমানরা মসজিদে যায় সেজদায় আর সনাতনীরা মন্দিরে যায় পূজা অর্চনায়। সময় করে চলে ধর্মীয় আচার আচরণ। কেউ কারো মনে আজ অবধি দাগ কাটেনি। সময়মত আজান ও নামাজ, নিয়ম করে পূজা অর্চনা। এক পাশে ধূপ কাঠি অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে কোরআনের সুমধুর অমিয় বানী অন্য পাশে গীতা পাঠ। এক পাশে জিকিরের ধ্বনি অন্য পাশে উলুধ্বনি। এমনিভাবেই যুগ যুগ ধরে সম্প্রতির আলো ছড়াচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও মন্দির।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, সৈকত লাগোয়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৬ সালে আর তার সাথের ‘সাগর সৈকত জাম মসজিদ’ প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হয়নি কেউই। বরং একে অপরের পরিপূরক হিসেবে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। এমনিতে কুয়াকাটা সনাতনী ধর্মের কাছে তীর্থস্থান হওয়ায় এখানে মতুয়া মিশনের মহা মিলন, রাসপূর্ণিমায় হাজারো হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থদের উপস্থিতিতে কেউ কোনদিন বিরক্তের ছাপ দেখেনি।
এখন চলছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজা। এ পূজা আয়োজন করার পূর্বে পূজা কমিটি, মসজিদ কমিটির সাথে আলোচনা করেছে। এমনটাই নিশ্চিত করেছে মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মো. হারুনুর রশিদ তিনি বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেই ধর্মীয় আচার আচরণ পালন করি। এতে আমাদের মাঝে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। কখনো কেউ আজানের সময় ঢোল তবলা বাজায়নি।
এ বিষয়ে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের উপাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন বলেন, মসজিদ কমিটি কখনো কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে নেয়। আমরা একে অপরের সাথে আলাপ করেই ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাই।
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক মো. সাইদুর রহমান বলেন, এক পথের শেষ মাথায় দুই ধর্মের ২টা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দেখে আমার কাছে ভালো লাগছে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। এমন সম্প্রতির নজির হাতেগোনা।
স্থানীয় বাসিন্দা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কুয়াকাটা শাখার আমির আলহাজ্ব মাওলানা মাইনুল ইসলাম বলেন, ধর্ম নিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি হয়নি। যে যার মত ধর্মীয় কালচার যার যার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পালন করে আসছে। আমরা তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেই। তারাও আমাদের দাওয়াত দেয়। আমরা সুখ দুঃখে পাশাপাশি থাকি।
শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) কাজল বরণ দাশ বলেন, যুগ যুগ ধরে এই সম্পৃতির উদাহরণ চলে আসছে। আগামিতেও থাকবে এমন সৌহার্দ্যতা।
কুয়াকাটা পৌর সভার সাবেক মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এখানে মানুষের বসবাস। সবাই মিলে মিশেই থাকি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নয় এখানে পাশাপাশি বৌদ্ধদের প্রার্থনা করার প্যাগোডাও আছে। এটা একটা জলন্ত সম্পৃতির উদাহরণ।’