বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৭:৫১ অপরাহ্ণ, ১৭ এপ্রিল ২০১৬
দিপ্তী রানী। এখন এক স্বাবলম্বী কৃষানীর নাম। এক সময় তিনি স্বাবলম্বী ছিলেন না। বাবা মায়ের অভাবী সংসার থেকে বিয়ের পর চলে আসেন স্বামী শিশির চন্দ্রের সংসারে। সেখানেও অভাব আর অভাব। অল্প বয়সে বিয়ের পর স্বামীর অভাবী সংসারে এসে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। স্বামী শিশির চন্দ্র পেশায় একজন বর্গা চাষী এ দিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না তাই সে প্রায়ই দিন মজুরেরর কাজ করে। বিয়ের পর স্বামীর এমন অবস্থা দেখে দিপ্তী রানীর মন কেঁদে ওঠে সংসারের জন্য কি করা যায়। এমন চিন্তা থেকে দ্বীপ্তি তার স্বামীরর পাশে এসে দারায় সহযোগিতার জন্য।
প্রথমে তিনি স্বামীর বিভিন্ন কাজেন সহযোগিতার পাশাপাশি টাকা সংগ্রহহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় তার কাছে স্বপ্নের মত ধরা দেয় এনজিও ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিএফইডি (ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাবেক মাইক্রোফিন্যান্স কর্মসূচী)। সেখান থেকে টাকা এনে বন্দকী জমি রেখে চাষের জমি বাড়ান দিপ্তী রানী। আস্তে আস্তে তার আয় বাড়তে থাকে এভাবে ঋনের টাকায় আয় বাড়িয়ে দ্বীপ্তি এখন ওই এলাকার স্বাবলম্বী নারীর স্থান করে নিয়েছেন সবাই এখন তার প্রসংশা করে।
গ্রামের আট দশ জন মহিলার মত দিপ্তী রানী একজন সাধারন গৃহিনী তবে তিনি সাধারন থাকেননি। স্বামীর আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। তিনি ভাবতে থাকে কি ভাবে স্বামীর সংসারে বাড়তি কিছু আয় করা যায়। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কোন হাতের কাজ জানেন না যা দিয়ে কোন কিছু শুরু করা যায়। স্বামী কৃষি কাজ করেন। তিনি দেখলেন কি ভাবে কৃষি কাজে স্বামীকে সাহায্য করা যায়। আয় বাড়াতে হলে বেশী জমি চাষ করতে হবে। কিন্তু তাদের টাকা কোথায়। এ নিয়ে দিপ্তী রানী এই চিন্তায় যখন উদ্বিগ্ন তখন পাসের বাড়ির রহিমা নামে এক মহিলার মাধ্যমে জানতে পারেন বদরখালী এলাকায় ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিএফইডি সমাজে দরিদ্র ও সুবিদা বঞ্চিত জন গোষ্ঠির দারিদ্র বিমোচন এবং জীবন – জিবিকার উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বদরখালী গ্রামের অনেক মহিলা মিশনের ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে কাঙ্কিত সফলতা পেয়েছে। তাদের পারায় রুপালী সমিতি নামে একটি মহিলা দলও আছে। একদিন দল পরিচালনাকারী কর্মী নয়ন মজুমদারের সাথে কতা বললেন দিপ্তী রানী।
তার সহায়তায় দলের অন্যান্য সদস্যের পরামর্শে ২০১২ সালের মার্চ মাসে তিনি ওই গ্রামের নারী দলের সদস্য হয়। এর পরে ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিএফইডি গৌরিচন্না ব্রাঞ্চ হতে প্রথম দফায় ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এক একর বাড়তি জমি বন্ধক রেখে স্বামীর সাথে কৃষি কাজে নেমে পড়েন। ধান, রবিসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ শুরু করেন। বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করে বিভিন্ন সবজি। এতে তার আয় বাড়তে থাকে আগের চেয়ে দ্বিগুন। সংসারের খরচের পর বাড়তি ফসল বিক্রি করে আরও ১বিঘা জমি বন্ধক রাখেন। বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি এবছর দিপ্তী রানী ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নিকট থেকে আরো ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন।
ফলন ভালো হওয়ায় সংসারের সারা বছরের তেলের চাহিদা মিটিয়ে ৫০ হাজার টাকার সূর্যমুখী বিক্রি করা যাবে বলে জানালেন দিপ্তী রানী। দিপ্তী রানীর সংসারে এখন অভাব নেই। চারিদিকে শুধু সুখের বন্যা। স্বী সন্তান নিয়ে মহা আনন্দে দিন কাটে তার। এলাকার পাড়া প্রতিবেশী আগে যারা তাকে এড়িয়ে চলত এখন সবাই তারা বিভিন্ন সামাজিক কাজে দিপ্তী রানীর সহায়তা নেয়। আগের দিপ্তী রানী এখন সবার মধ্যমনি ‘দিপ্তী দিদি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দিপ্তী রানী সঙ্গে কথা হয় তার বাড়ীতে এক পরন্ত বেলায়। অত্যন্ত হাসি খুশি মনের এক সুখী দিপ্তী রানী বলে মনে হল তাকে। তিনি জানান, বাবা মায়ের ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবার বাড়ী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া গ্রামে। ৫ বছর আগে বিয়ে হয় বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ছোট বদরখালী গ্রামে। মা বাবা সাধ থাকলেও সাধ্যের অভাবে বেশী লেখাপড়া করাতে পারেন নাই মেয়েকে। গ্রামের পরিবেশে ৮ম শ্রেনী অধ্যায়ন অবস্থায় ছোট বয়সে ছোট বদরখালী গ্রামের শিশির চন্দ্রের সাথে তার বিয়ে হয়। শিশির চন্দ্র মাত্র ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। বিয়ের পরে সংসার সামাল দিতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। বিয়ের দু’বছরের মাথায় দিপ্তীর কোল জুরে আসে একটি কন্যা সন্তান। তার নাম তিশা। যার বর্তমান বয়স ৫ বছর ।
এখন সে বাড়ীতে বসে মায়ের নিকট পড়াশুনা করে। আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করাতে চান মেয়েকে। তার ইচ্ছা মেয়েকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে করে গড়ে তুলতে চান। সর্বশেষে তিনি ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিএফইডি কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন তাদের ঋণের টাকায় আমি আজ সংসারের সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছি। এখন আর আমাকে টাকা পয়সার জন্য কার কাছে হাত পাততে হয়না। ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ডিএফইডির বরগুনার সিনিয়র এড়িয়া ম্যানেজার মো: নাসির উদ্দিন জানান, দিপ্তীর মত অনেকেই ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। তারা এখন বেঁচে থাকার পথ খুজে পেয়েছে।