সাবেক চিফ হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ভাইয়ের ছেল পায়েল সেরনিয়াবাত (২১)। পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক সালমনকে লাঞ্ছিত করেছিল।
এই ঘটনায় ৬ মাস জেল খেটে বের হয়ে পায়েল মাস দুয়েক ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিল কলেজের এক শিক্ষককে, নকল ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে (!) ২৪ জানুয়ারি সেই শিক্ষকের ভাড়াবাড়িতে দা নিয়ে ঢুকে তাঁকে উপর্যুপরি কোপানোর চেষ্টা করে পায়েল তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে।
গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আকন কামরুজ্জামানের ভাড়াবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগকর্মী পায়েল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রইস সেরনিয়াবাতের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের প্রথম পরীক্ষার দিন অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে পায়েল বহিষ্কৃত হয়। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক সালমনকে লাঞ্ছিত করে পায়েল।
ওই ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তারিক সালমন পায়েলকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পায়েল বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য কলেজের সহকারী অধ্যাপক আকন কামরুজ্জামানকে দায়ী করে এবং জামিনে বের হওয়ার পর থেকে প্রতিশোধ নিতে তাঁকে খুঁজতে থাকে। ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শিক্ষক কামরুজ্জামান কলেজ লাগোয়া ভাড়াবাসার সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলছিলেন।
হঠাৎ পায়েলের নেতৃত্বে দুই-তিনজন ছাত্রলীগকর্মী হাতে রামদা নিয়ে তাঁর দিকে তেড়ে আসে। বিপদ বুঝতে পেরে শিক্ষক দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন। এরপর পায়েল সহযোগীদের নিয়ে রামদা দিয়ে কুপিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
তারা শিক্ষককে কোপানোর জন্য বারবার চেষ্টা করছিল আর শিক্ষক একটি স্টিলের চেয়ার হাতে নিয়ে আত্মরক্ষা করছিলেন। একপর্যায়ে কলেজের পিয়ন যতীন্দ্রনাথ ও কয়েকজন ছাত্র এগিয়ে এসে শিক্ষককে রক্ষা করে। কলেজের শিক্ষকসহ আশপাশের কিছু মানুষও এগিয়ে আসেন। তখন পায়েলসহ হামলাকারীরা সটকে পড়ে।
শিক্ষক কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ওপর হামলা করার হুমকি আগেই দেওয়া হয়েছিল এবং তা কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কমলা রানীকে অবহিত করেছিলাম। বিষয়টি জানতে পেরে কমিটির সভাপতি পায়েলকে শাসিয়েও দেন। এতে পায়েল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আজ হামলা চালায়।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রইস সেরনিয়াবাত বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত। আমার ছেলে শিক্ষকের সঙ্গে যা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে তা পায়েলসহ আমি মাথা পেতে নেব।’
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পায়েল যে হুমকি দিয়েছিল সেই বিষয়টি কামরুজ্জামান আগেই আমাকে অবহিত করেছিলেন। শিক্ষকের ওপর হামলার বিষয়টি শোনামাত্র থানার ওসিকে জানিয়েছি।
আমরা কলেজ শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি ঘটনার নিন্দা জানাই। কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষা কাউন্সিলের সভায় আইনগত ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ওই শিক্ষক কিংবা কলেজের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শিরোনামOther