বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:০৩ অপরাহ্ণ, ৩১ জুলাই ২০১৭
আইনজীবীর দায়ের করা মামলায় ইউএনও গাজী তারিক সালমন জামিন চাইতে গেলে তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন শুধু একজন।তিনি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান। পঞ্চাশ জন আইনজীবির বিপক্ষে গিয়ে সেদিন তিনি একাই লড়েছিলেন ইউএনও সালমনের পক্ষে।
দীর্ঘ ৪২ বছরের আইন পেশায় এ অভিজ্ঞতা বিরল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, মামলার বাদী বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজুসহ স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালীদের ভয়ে সেদিন তারিক সালমনের পক্ষ নেয়ার সাহস দেখাননি কেউ। এ পরিস্থিতিতে ৫০ জন আইনজীবির বিপক্ষে লড়ে আইন পেশাকে সমুন্নত রেখেছেন মোখলেসুর রহমান।
১৯৪০ সালের ১ জুলাই জন্ম নেয়া এই আইনজীবি বর্ণিল জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করলেও ৪২ বছরের কর্মময় জীবনে কোন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে মামলা লড়াইয়ের ঘটনা এই প্রথম।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সেদিনের চিত্র। তুলে ধরেছেন মামলার বিভিন্ন অসঙ্গতিও।
ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসদাচারণ করার অভিযোগ এনেছিলেন মামলার বাদী ওবায়েদুল্লাহ সাজু।
পরে প্রত্যাহার হওয়া মামলার শুনানীতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হলে এ বিষয়ক প্রমাণপত্রাদি উপস্থাপন করেন তারিক সালমনের পক্ষের আইনজীবি মোখলেসুর রহমান। প্রমাণ হিসেবে তিনি তার কাছে থাকা বিভিন্ন পত্রিকায় সেসময় সালমনের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মানবন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রতিবেদনের ফটোকপি উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিচারক আলী হোসাইন সেগুলো নাকচ করে দিয়ে তার কাছে মূল কপি দাবি করেন।
বাদীপক্ষে বক্তব্য দেন চারজন। মামলার বাদী এবং বরিশাল আইনজীবি সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত’ করার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর গালে কোন তিল ছিল না। সেখানে তিল এঁকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে।’ আইনজীবি মোখলেসুর রহমান এর জবাবে বলেন, ‘সাজু আপনি হয়তো বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি। আমি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে উনার গালে তিল ছিল।’
এরপর ওবায়েদুল্লাহ সাজু তার পরবর্তী যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন, আমণ্ত্রণপত্রের পেছনে রণাঙ্গণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার বিষয়টি। আইনজীবি মোখলেসুর রহমান জানান, স্বাধীনতা দিবসের আমণ্ত্রণপত্র ছাপনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাজের অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি একজন সরকারি কর্মচারি বিধায় সরকারের অনুমোদন ব্যতীত মামলা আদালত কর্তৃক গ্রহণ সিআরপিসি’র ধারা অনুসারে সমীচীন হয়নি।
সিআরপিসি’র তৃতীয় তফসিল এর পঞ্চম কলাম অনুসারে দণ্ডবিধির ৫০১ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বিচারক ইউএনও সালমনকে হাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন।
দু’ঘণ্টা পর অাইনজীবি মোখলেসুর রহমান হাজতে গেলে বিচারপতি আলী হোসাইনের পেশকার তাকে জানান, বিচারপতি গাজী তারিক সালমনকে বেইলবন্ড জামিন দিতে বলেছেন। মানহানির যে মামলায় ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় সেই মামলা করতে হবে দেওয়ানি আদালতে। মানহানির যে মামলায় শাস্তি চাওয়া হয় তা করতে হয় ফৌজদারি আদালতে। ওই মামলায় বাদী পাঁচ কোটি টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তারিক সালমনের হাজতবাস ও জামিন বিষয়ে মোখলেসুর রহমান বলেন, তারিক সালমনের মামলাটি কোনভাবেই বৈধ নয়। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন। এমনকি সেখানে যে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে তা অযৌক্তিক ছিল। এটি একটি জামিযোগ্য মামলাও ছিল।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ২৩ জুলাই বাদী সাজু ২৪১(এ) পিটিশন অনুযায়ী সালমনের বিরুদ্ধে কোন মামলা হবে না উল্লেখ করে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। তার আগে দল থেকে তাকে বহিস্কার করে অাওয়ামী লীগ।”