বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৪:১৩ অপরাহ্ণ, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯
বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
শনিবার রাতে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আদেল উদ্দিন মোল্লা।
অভিযুক্ত তিন আওয়ামী লীগ নেতা হলেন- বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেক মিয়ার ছেলে ও বসন্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান মিয়া, ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ডিগ্রিচর বারোখাদা গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন শেখের ছেলে ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. জামাল উদ্দিন এবং বসন্তপুর ইউনিয়নের হাটজয়পুর গ্রামের মৃত তালেব আলী শেখের ছেলে ও একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জালাল উদ্দিন।
লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মো. আদেল উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমরা বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের সব শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফল তৈরি করছিলাম।
সেই সময় আবদুল মান্নান মিয়া, শেখ মো. জামাল উদ্দিন ও এসএম জালাল উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জন আমার (প্রধান শিক্ষকের) রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় জানালা ও দরজা বন্ধ করে দেন। অতঃপর তারা আমার কাছে রেজুলেশন বহি চান ও অকথ্য ভাষায় বাবা-মাকে জড়িয়ে গালাগাল করেন।
জামাল উদ্দিন তার পা থেকে জুতা খুলে আমাকে মারতে আসেন এবং জালাল উদ্দিন বলেন, সালাকে চাকরি করার শিক্ষা দিয়ে দেব; তুই এইখানে একদিনও চাকরি করতে পারবি না।
জালাল উদ্দিন আরও বলেন, আমি তোকে একটা ফেল করা ছাত্রকে ফরমফিলাম করতে বলেছিলাম, সালা তুই সেটা করিস নাই কেন?
আবদুল মান্নান বলেন, সালা তোকে এখানে মেরে পুঁতে ফেলব, দেখি তোকে কে ঠেকায়।
এ সময় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা পাশের রুম থেকে দৌড়ে এসে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করেন– এখানে এত হট্টগোল কীসের। তখন জামাল উদ্দিন সব শিক্ষককে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং শিক্ষক আলমগীর হোসেনকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর খানখানাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. শহীদুল ইসলাম স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তখন আবদুল মান্নান মিয়া তার দলবল নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক আদেল উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি বেতন নেয়া এবং ফরমফিলাপের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আমরা তার কাছে এ বিষয়টি শুনতে গেলে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে আমরা কোনো খারাপ আচরণ করিনি।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, প্রধান শিক্ষক আদেল উদ্দিনের দায়েরকৃত অভিযোগটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তসাপেক্ষে পরে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের সব শিক্ষক ও কর্মচারী।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে সিগারেট এনে না দেয়ায় বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আদেল উদ্দিন মোল্লাকে লাঞ্ছিত করেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান মিয়া।
এ বিষয়ে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘সিগারেট এনে না দেয়ায় রাজবাড়ীতে আ’লীগ নেতার হাতে প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত’ সাংবাদিকদের জানান।