স্ত্রীর মামলায় আসামি ওসি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: মানিকুল ইসলাম আগে ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর। পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন ওসি। সিলেটের ডাক্তার স্ত্রীর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওসি মানিকুল এখন বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত।
সিলেটের সাব-ইন্সপেক্টর থাকাকালে প্রতারণা করে বিয়ে করেছেন ওসমানীনগরের এক মহিলা ডাক্তারকে। আগের বিয়ে গোপন রেখে বিয়ে করার পাশাপাশি ৮ বছরের সাংসারিক জীবনে লুটে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। টাকা চাইতে গেলে করা হয় মারধরও।
বিয়ের সময় তিনি নিজেকেও সাবেক এক মন্ত্রীর ছোট ভাই হিসেবেও পরিচয় দেন। এসব ঘটনায় ২৬শে সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেছেন সিলেটের ওই মহিলা ডাক্তার।
পরে আদালতের নির্দেশে ১লা অক্টোবর কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। তবে মামলা দায়েরের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ওই পুলিশ গ্রেপ্তার হয়নি।
অভিযুক্ত ওসি মানিকুল ইসলাম রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার গোদাগাড়ী গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র। ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ওই মহিলা ২০০৭ সালে আরেক যুবককে প্রথমে বিয়ে করেছিলেন।
এরপর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ২০০৯ সালে কানাডায় চলে যান। তাদের একটি কন্যাসন্তান জন্ম হয়। পারিবারিক কলহের কারণে ২০১৩ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে কানাডায়ই বিচ্ছেদ হয়।
এ ঘটনার পর তিনি তার কন্যাসন্তান নিয়ে সিলেটের ওসমানীনগরে পিত্রালয়ে এসে ডাক্তারি পেশায় আবার নিয়োজিত হন। তৎকালীন সিলেট রেঞ্জে চাকরির সুবাদে এস আই মানিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময় অসুস্থতা জনিত কারণে ওই ডাক্তারের চেম্বারে আসা যাওয়া করতেন।
এতে ওই মহিলা ডাক্তারের দিকে নজর পড়ে তার। একপর্যায়ে ওই মহিলা ডাক্তারের পিতার সঙ্গে সুসর্ম্পক গড়ে তোলেন। পরে মানিকুল ইসলাম জানতে পারেন মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।
এই সুযোগে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে তার পিতা ঢাকা কলেজের অধ্যাপক এবং আরও এক মহিলাকে বদরুন নেছা কলেজের অধ্যাপিকা সাজিয়ে ওই ডাক্তার মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মানিকুল।
এ সময় তিনি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স পাস বলে পরিচয় দেন। একইসঙ্গে তার ভাই বৃটিশ কাউন্সিলের উচ্চ পদে কর্মরত এবং নিজের জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করে সাবেক এক মন্ত্রীর ছোট ভাই পরিচয় দেন মানিকুল ইসলাম। এর বাইরে ঢাকায় বসুন্ধরা ও ঢাকার উত্তরায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানান।
তার এসব লোভনীয় প্রস্তাব ও চাপাচাপিতে একপর্যায়ে রাজি হন ওই ডাক্তার মহিলা। সম্মতি দেন তার পিতাও। রাজি হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারি কাবিননামা মূলে মানিকুলের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর মানিকুল ইসলামের আরেক চেহারা প্রকাশ পায়। একাধিক বিবাহিত স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি সামনে বেরিয়ে আসে।
এ সময় পারিবারিক অশান্তির কথা মাথায় রেখে ওই মহিলা সব মুখ বুঝে সহ্য করলেও মানিকুলের নির্যাতনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়।
সে বিভিন্ন সময় ওই মহিলার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই ডাক্তার মহিলা তার কন্যাসন্তানসহ কানাডা চলে যান।
একপর্যায়ে মানিকুল ইসলাম তাকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। মানিকুলের নামে কানাডার অ্যাম্বাসিতে আবেদন করলে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানায়; দুইবার প্রতারণার কারণে ‘রেড লিস্টে’ রয়েছে মানিকুল ইসলামের নাম।
এদিকে কানাডা যেতে ব্যস্ত হয়ে ডাক্তার স্ত্রীকে হুমকি-ধমকি শুরু করেন মাহিকুল। কানাডা থেকে দেশে আসার পর নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
মামলার আর্জিতে ওই ডাক্তার মহিলা জানান- বিয়ের পর আসামি মানিকুল ইসলাম হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করলে ভুক্তভোগী মহিলা আইনের দারস্থ হন। এর আগে অভিযুক্ত মানিকুল ইসলাম নারী সংক্রান্ত এবং অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় ১৩ বার পুলিশ বিভাগ থেকে তিরস্কার জানানো হয়।
প্রতারণা এবং একাধিক বিয়েসহ নানা অপরাধে লিপ্ত রয়েছে সে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ডাক্তার মহিলা জানিয়েছেন- মানিকুল ইসলামের অব্যাহত হুমকিতে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছি। সে বিভিন্ন সময় বলে যাচ্ছে আইন তার হাতের নাগালে। সে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারের লোকজনকে জেল খাটাবে।
কী করে আমি সিলেটের গ্রামের বাড়িতে থাকি সে দেখে নিবে বলেও হুমকি প্রদান করছে। এ ব্যাপারে ওসি মানিকুল ইসলামের সঙ্গে বার বার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ জানিয়েছেন- মানিকুল ইসলাম আগে এস আই ছিলেন। এখন তিনি ওসি।
বরিশাল রেঞ্জে যুক্ত রয়েছেন। ডাক্তার স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে মামলা গ্রহণের পর আমরা তদন্তে আছি।
বিষয়টি অবগত করে আমরা বরিশাল রেঞ্জে পত্র দিয়েছি। এখনো সেটির রিটার্ন আসেনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. নজমুল হুদা বলেন, মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
যেহেতু আসামি একজন সরকারী কর্মকর্তা সেহেতু সরকারের রুল অনুয়ায়ী মামলার তদন্ত চলছে। আসামি যে কর্মসংস্থানে আছেন সেখানে আসামি গ্রেপ্তারে বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
দেশের খবর