বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার এক গৃহবধূকে স্বামীর পরকীয়ায় বাধা ও স্বামীর পরিবারের যৌতুকের দাবি করা টাকা না দেয়ায় ঢাকায় হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের সৈয়দ জসিম উদ্দিন চুন্নুর মেয়ে সৈয়দা মারিয়া রিপাকে (১৯) গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার হাসাননগর গ্রামের ভাড়াটিয়া স্বামী আব্দুল হাই (৩২) যৌতুকের দাবি করা টাকা না দেয়ায় ও তার পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে নিহত রিপার পরিবারের অভিযোগ।
রিপাকে হত্যার পর দেবর রেজাউল ও ননদ মাহমুদা আক্তার ঢাকা মেডিকেলে লাশ ফেলে পালিয়ে যান। নিহত রিপার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হন্তান্তর করে।
রিপার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ শিহিপাশা নিজ বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
রিপার পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- গত ২০১৬ সালের ৯ডিসেম্বর পারিবারিক ভাবে বরিশাল কোতয়ালি থানার ভেদুরিয়া গ্রামের আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে ঢাকার রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল হাই’র (৩২) সাথে বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় রিপার পরিবার নগদ এক লক্ষ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ আসবাবপত্র দেয়। রিপাকে নিয়ে তার স্বামী ও তার পরিবার ঢাকায় বসবাস করত।
স্বামী আব্দুল হাই গত ৮ থেকে ৯ মাস আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জর বালুরচর এলাকার এমারত হোসেনের মেয়ে ও প্রবাসীর স্ত্রী শাহিদা বেগমের (২৮) সাথে অবৈধ পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
স্বামী আব্দুল হাই ব্যবসা করার জন্য যৌতুক বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে রিপার পরিবারের কাছে। রিপার পরিবার গরীব হওয়ায় স্বামীর দাবি করা যৌতুকের টাকা দিতে পারবে না বলায় তাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করত। গত ২৪ নভেম্বর স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাধা ও যৌতুকের টাকা না দেয়ায় রিপাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়।
পরের দিন ২৫ নভেম্বর কামরাঙ্গীরচর থানায় স্বামী আব্দুল হাই, শশুর আব্দুল বারেক ও শাশুড়ী মোর্শেদা বেগম রাণীর নামে সাধারণ ডায়েরি করেন।
থানায় অভিযোগ দেয়ার কারণে রিপাকে পুনরায় তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন মারধর করেন। পরবর্তীতে রিপা আবার ২৭ নভেম্বর কামরাঙ্গীরচর থানায় স্বামী আব্দুল হাই, শশুর আব্দুল বারেক ও শাশুড়ী মোর্শেদা বেগম রাণী, ভাই রেজাউল ও পরকীয়া প্রেমিকা শাহিদা বেগমের নামে অভিযোগ দায়ের করে।
পরে পুলিশ স্বামী আব্দুল হাইকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং রাতে দুই পরিবারের সম্মতিতে স্বামী আব্দুল হাই যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও পরকীয়া প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক না রাখার শর্তে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতন বেড়েই চলছিল রিপার উপর।
বড় বোন সৈয়দা মার্জিয়া ও মামা পলাশ মোল্লা বরিশালটাইমসকে জানান, গত ৫ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিত ভাবে স্বামী তার পরিবারের লোকজন ও পরকীয়া প্রেমিকা শাহিদা বেগম গলায় ফাঁস দিয়ে রিপাকে হত্যা করে। পরে রিপার দেবর ও ননদ রিপাকে ঢাকা মেডিকেলে আনলে কত্যর্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
রিপার মৃত্যু নিশ্চিত যেনে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন ঘরে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহিন ফকির জানান, ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। সে মোতাবেক আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
শিরোনামবরিশালের খবর