হাসপাতালে সন্তান প্রসব: পৌনে ২ ঘণ্টা পর পরীক্ষার হলে মা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন এক প্রসূতি। এর পৌনে ২ ঘণ্টা পর কেন্দ্রে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বসেন ওই পরীক্ষার্থী।
শনিবার পুত্রসন্তান প্রসবের পর বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় জিতু নামের ওই শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। জানা গেছে, বানারীপাড়া উপজেলার সরদর ইউনিয়নের জবেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী জিতুর (১৬) এক বছর পূর্বে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের ধারালিয়া গ্রামের মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে পরিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণ করতে না পারলেও বাড়িতে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি এবার বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের পৌনে ২ ঘণ্টা পর তিনি বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয়পত্রে অংশগ্রহণ করেন।
পরে এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিবসহ স্থানীয়দের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। এ বিষয়ে বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও সরকারী ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত হাওলাদার জানান, আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি, এক পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসব করেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলতে পারছি না।
এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে এক ছাত্রীকে ম্যাকসি পরা অবস্থায় দেখতে পাই। এ সময় তাকে অসুস্থ মনে হলেও তার কক্ষে ডিউটিরত শিক্ষক এ ব্যাপারে তাকে কিছুই জানাননি। সোমবার ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। তবে পরবর্তীতে তাকে ডাক্তারি সনদসহ পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জবেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. ছত্তার মোল্লা যুগান্তরকে জানান, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থায় তার বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। ওই ছাত্রী এবার এসএসসি বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। তিনি ওই বিষয়টি পরীক্ষা চলাকালে জানতে পারেননি বলে যুগান্তরকে জানান।
এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ৯টায় জিতু নামের এক প্রসূতি শিক্ষার্থী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে নবজাতককে রেখে পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা জানান, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবারের মেয়েরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা খবর পেলে সেখানে গিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন।
এরপরও জীবন সংগ্রামী স্কুলছাত্রী জিতু যে কোনো কারণে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। এক্ষেত্রে ওই ছাত্রী সন্তান প্রসবের পর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাইকে শিক্ষা জীবনের প্রয়োজনীয়তাকে জানান দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
বরিশালের খবর, বিভাগের খবর