দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আজও ভোলেনি সেই ভয়াবহ ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তান্ডবের কথা। অনেকেই এখনও স্বামী, সন্তান, বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে সিডরে কেড়ে নেওয়ায় পরিবারে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। এ জনপদে প্রাণ হারানো মানুষের স্মৃতি কিংবা কবরস্থান পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়।
আকাশে মেঘ দেখলেই সসুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মানুষের বেড়ে চলে ছোটাছুটি। সিডর আঘাত হানার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের যথাযথ সংস্কার কিংবা পুর্ননির্মাণ না হওয়ায় সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন ‘সিডর’ লন্ডভন্ড করে দেয় বিস্তীর্ণ জনপদ। ওই সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয় এসব এলাকার বেড়িবাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা, কৃষকের ক্ষেত ও মৎস্য সম্পদ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডরে এ উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৭৮ জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জেলে। স্বজন হারাদের কাছে তাদের খোঁজখবর নিতে গেলে তারা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জীবনে এই দিনটির কথা ভুলতে পারবেনা।
ওইসব ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনকে বিভিন্ন বে-সরকারী সংস্থা ৪ হাজার ৪’শ ৪০ টি পরিবারকে পাকা ও আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছন, সিডরের পরবর্তিতে যেসব বাঁধ মেমারমত করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক। ইতোমধ্যে মহিপুর, লালুয়া, ও দেবপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁেধর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জোয়ারের পানির তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে তা ঠেকাতে পারবে না এই বাঁধ।
এছাড়া অমাবস্যা-পূর্নিমায় বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখনো গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে থাকে। এছাড়া সিডরে ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্নবাসনের জন্য বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ঘর ও আবাসন পল্লী নির্মান করে দিয়েছে। বর্তমানে ওইসব নির্মাণ করা অধিকাংশ ঘরগুলোর বেহাল দশা হয়ে পরেছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় তাদের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সোনাতলা গ্রামের সোয়াইব পন্ডিতের দুই মেয়ে লুৎফুল নেছা ও রিয়া মনি সুপার সাইক্লোন সিডরে নিহত হয়। তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম একই সাথে দুই মেয়ে হারিয়ে সে এখন পাগল প্রায়। সে দিনের কথা তার কাছে জানতে চাইলে বার বার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আবসানের আব্দুর রব বরিশালটাইমসকে জানান, এ আবাসনে ২৮০ টি ঘর রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরই এখন বসবাসের অনুপযোগী। কোন ঘরে চাল নেই,আবার কোন ঘরে বেড়া নেই। চালে পলিথিন দিয়ে থাকতে হয়। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে ঘরে সুয়ে সুয়ে চাঁদ ও তারা দেখার মত।
মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বিধ্বস্ত বাঁধ লাগোয়া বসবাসরত গৃহিনী আলেয়া বেগম বলেন, আবহাওয়ার সিগন্যাল দিলে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এই বুঝি পানি উঠে তলিয়ে গেল।
লালুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, সিডরের পরে তার এলাকায় বেড়িবাঁধের সংস্কার হয়েছে নামে মাত্র। ফলে জোয়ারের লোনা পানি ঢুকে ফসল নষ্ট করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান জানান, সিডর পরবর্তি সময় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ওইসব ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাস উপযোগী করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল খায়ের বরিশালটাইমসকে বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার বেরিবাঁধ সংস্কারের জন্য টেন্ডার সস্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময় বিধ্বস্ত বেঁরিবাধের কাজ শুরু হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ বরিশালটাইমসকে বলেন, উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ ঝুকির সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানে কাজ চলছে।’
শিরোনামটাইমস স্পেশাল