বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৪ অপরাহ্ণ, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
৩ ছাত্রকে ঝাড়ু-বেত দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি।। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গল নিকারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতন এবং বেত আর ঝাড়ু দিয়ে শিক্ষকরা পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ বহিরাগত যুবকের কাছে কোচিং সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেয়ার অভিযোগও উঠেছে প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এলাকাজুড়ে।
এদিকে তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় দুই সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সাইদুর রহমান স্বপন ও মো. কামরুজ্জামান রেজা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, গত রোববার বিদ্যালয়ে এসে বাংলা বই হারিয়ে ফেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র রেজোয়ান ইসলাম লিমন। পরে সে প্রধান সেলিম হোসাইনের কাছে একটি বাংলা বই চাইলে তিনি লিমনকে হাতপাখা দিয়ে পেটানো শুরু করেন। একপর্যায়ে পাখাটি ভেঙে যায়। খবর পেয়ে লিমনের মা লিজা বেগম বিদ্যালয়ে ছুটে গেলে প্রধান শিক্ষক মারধর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
সপ্তাহ দুই-এক আগে ঝাড়ু বানানোর জন্য লোটাস নামে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রকে নারিকেলের শলা আনতে বলা হয়। ওই ছাত্র শলা না দিতে পারায় শিক্ষকদের ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সহকারি শিক্ষক মো. ফেরদৌস তাকে ধরে বিদ্যালয়ে নিয়ে গেলে সাবিহা সুলতানা নামে আরেক সহকারি শিক্ষিকা তাকে ঝাড়ুপেটা করেন। এছাড়াও দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (দ্বিতীয় সাময়িক) পরীক্ষার পরদিন বিদ্যালয় না যাওয়ায় ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাজিন গাজিকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনও ধরনের নিয়মনীতি না মেনে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছেমতো স্কুল চালাচ্ছেন। নিজের মতো করে আসেন বিদ্যালয়ে, ছুটিও দেন ইচ্ছেমতো। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর নিয়ম থাকলেও কয়েকজন শিক্ষক আসেন ১০-১১টার দিকে। বিদ্যালয়ে এসে কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস নেন। এরপর বাড়ি যান তারা।
তারা আরো অভিযোগ করেন, এ বিদ্যালয়ে ছোট ছোট শিশুদের শাসনের নামে চলে মারধর আর গালিগালাজের মহড়া। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের এমন নির্মম আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিশুরা। সেই সঙ্গে দিন দিন আশেপাশের বিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছে তারা।
বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক মো. ফেরদৌস বলেন, ‘লোটাস নামে ওই ছাত্রকে রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়েছিলাম। তখন সাবিহা ম্যাডাম তাকে ধমক দেয়। তবে মারধর করেননি।’ ঝাড়ু দিয়ে মারধরের অভিযোগ সহকারি শিক্ষিকা সাবিহা সুলতানাও অস্বীকার করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ সত্য হয়। এটিও স্যাররা তদন্ত এসেছিল, আমি আমার বক্তব্য লিখিত আকারে তাদের কাছে জমা দিয়েছি।’ তবে বিদ্যালয় একটি কক্ষ বহিরাগত যুবকের কাছে কোচিং সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেয়ার অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো. আকতার হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য দুইজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই বিদ্যালয়ের পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং বিদ্যালয় মেরামতের জন্য বরাদ্দের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সেলিম হোসাইনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা অনিতা রানী দত্ত। এরপর গত ৩০ আগস্ট একই দিনে সেলিম হোসাইনসহ তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তাদেরকে শোকজ করেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বপন।