বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২:৫৫ অপরাহ্ণ, ২২ অক্টোবর ২০২৪
তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি: ঠিকাদারের গাফিলতি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভোলার উদাসীনতায় নির্ধারিত মেয়াদের প্রায় ৩ বছর পরও শেষ হয়নি ভোলার তজুমদ্দিনে ফজিলতুননেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ। এতে কক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে প্রতিনিয়ত। ওয়াশব্লক সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ভবনের রুমের দরজার চৌকাঠে ব্যবহার করা হয়েছে একেবারেই উসার ও নিন্মমানের কাঠ। এছাড়াও নির্মাণসামগ্রী বিদ্যালয়ের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে ফজিলতুননেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৫তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ পান মেসার্স এসএস এন্ড এমটি এন্টারপ্রাইজ নামের গোপালগঞ্জের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসএস এন্ড এমটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন না করে সাব-ঠিকাদারী দিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বলে জানা গেছে।
সাব ঠিকাদার ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী দুই বছরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। কাজের আদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করার কথা থাকলে, কবে নির্মাণকাজ শেষ হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতেও পারছেন না।
সোমবার (২১অক্টোবর) বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন ভবনের আশায় পুরোনো ভবন ভেঙে এবং জায়গা ছেড়ে দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ভবনের কাজ শুরুর প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো অর্ধেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদারের গাফিলতি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভোলার উদাসীনতায় নির্ধারিত সময়ে নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের পুরান ভবনের ব্যবহারের অনুপযোগী ৪টি রুমে পাঠদান করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। যে সব রুমে বর্ষার সময় ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। অন্যদিকে ওয়াসব্লক না থাকায় ছাত্রীরা পড়ছেন সব বেশী সমস্যায়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, একদিন কাজ চললে আবার ১মাস কাজ বন্ধ থাকে। ঠিকাদারের এমন গাফিলতির কারণে স্কুলের ভিতরে যে কেউ অবাধে প্রবেশ করায় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কা প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন। এছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী বিদ্যালয়ের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন ভবনের কাজ যেটুকু হয়েছে তাতে দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার পুরো ভবনের দেয়ালে শেওলা পড়ে গেছে।
স্কুল ভবনের কাজ বাস্তবায়নকারী মো. তানিম বলেন, আমি এসএস এন্ড এমটি প্রতিষ্ঠানের কেউ না। কাজটি ক্রয় করে বাস্তবায়ণ করছি। তবে প্রতিষ্ঠান যথা সময়ে কাজের সাইড বুঝ দিতে না পারায় কাজ শুরু করতে দেরী হওয়ায় যথা সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।
জানতে চাইলে ফজিলতুননেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতিতে প্রায় ৩ বছর আগেই ভবনটির কাজ শেষ করে বুঝ দেয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজই শেষ হয়নি। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে বলা অনিশ্চিত। ভবন সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত পাঠদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাজের মানের বিষয়ে আমি কিছুই বলবো না আমি চাই আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ করে নতুন একাডেমিক ভবনটি বুঝ দেক।
ভোলা জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহি প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. নুর নবী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয়ে অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজে গাফিলতির কারণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসএস এন্ড এমটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করেছেন। তারা আর কখনো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোন টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। তারপরও যত দ্রুত সম্ভব আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’