৪৭ মিনিট আগের আপডেট বিকাল ২:৫০ ; সোমবার ; মার্চ ২০, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

৫ নভেম্বর কী ঘটবে বরিশালে? গোটা জেলাজুড়ে আতঙ্ক-উৎকন্ঠা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
৭:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২২

৫ নভেম্বর কী ঘটবে বরিশালে? গোটা জেলাজুড়ে আতঙ্ক-উৎকন্ঠা

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল: : ৩১ অক্টোবরের পর হঠাৎ করে বিভাগীয় শহর বরিশালের পরিবেশ পাল্টে গেছে। অনুষ্ঠেয় বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে শান্ত বরিশালের রাজনীতির মাঠ অশান্ত হয়ে উঠেছে। ক্রমশই তা সংঘাতের দিকেই ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ৫ নভেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন মাঠ দখলে নিয়েছে, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ পাল্টা অবস্থান নিল, কর্মসূচি দিয়ে নেমেছে মাঠে। একদিকে চলছে বিএনপির গণসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি, অন্যদিকে আ’লীগ সন্ধ্যা হলেই শোডাউন দিয়ে বিএনপির সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে। সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যার ব্যবধানে নেতাকর্মীদের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনায় উজ্জীবিত বিএনপি অনেকটাই হতাশ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে তারা মাঠে থাকবে। দৃশ্যত ঘটছেও তাই, সন্ধ্যা হলেই প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিলের মাধ্যমে শোডাউনের দিয়ে বিএনপিকে চেপে ধরার কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে গণসমাবেশের আয়োজকরা। সেই সাথে পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বলছে- এভাবে চলতে থাকলে মহাসমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের সংঘাতের আশংকা বাস্তবে রূপ নিতে পারে। ফলে অনেকের দৃষ্টি এখন ৫ নভেম্বরকে ঘিরে। স্থানীয় বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলস পার্ক মাঠ) অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির এই সমাবেশ।

যদিও বিএনপি বলছে- কোন বাধাই এই গণসমাবেশকে রোধ করা যাবে না। তারা ইতিমধ্যে গণসমাবেশ সফল করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আশা করছে- এবারের বেলস পার্ক মাঠের মহাসমাবেশ হবে স্মরণকালের বৃহত্তম গণসমাবেশ। লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল, গণসমাবেশের কর্মসূচি আসার পর থেকে বিএনপি প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মাঠ দখলে রেখেছিল। যা গত ১২ বছরেও এরূপ দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ ছিল নিশ্চুপ। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। প্রথমে পরিবহন ধর্মঘট, দ্বিতীয় দফায় নগরীর অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন চলাচলে ৪ ও ৫ নভেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ, তৃতীয় আবাসিক হোটেল বুকিং বন্ধসহ ডেকোরেটরদের সমাবেশে মালামাল সরবরাহে কোন কোন ক্ষেত্রে মৌখিক আবার কোথাও আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরই পরিস্থিতি উত্তাপের আভা ছড়াতে শুরু করে। যার বিস্ফোরণ ঘটে ৩১ অক্টোবর। এদিন হঠাৎ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন একত্রিত হয়ে ৩০টি ওয়ার্ড থেকে সকাল বিকেল মিছিল নিয়ে নগরীতে শোডাউন দেওয়া শুরু করেছে। সেইসাথে শুরু হয়েছে বিচ্ছিন্ন সংঘাত।

বিএনপি গণসমাবেশে র্নিদলীয় জনতাকে আকৃষ্ট করতে দায়িত্বশীল নেতারা লিফলেট বিতরণে বরিশাল নগরী থেকে বিভাগের জেলা ও উপজেলায় লিফলেট বিতরণ শুরু করলে আ’লীগ নেতাকর্মীরা মুখোমুখী চলে আসে, চালায় হামলা। সোমবার দুপুরে প্রথম দফায় হামলার ঘটনা ঘটে উজিরপুর উপজেলায়। জেলা বিএনপি নেতা এবায়েদুল হক চানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় সানুহার বাজারে লিফলেট বিতরণ শুরু করলে যুব ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ৫জন আহত হওয়া নিয়ে বিএনপির ভেতরে উত্তেজনা চলার মাঝে সন্ধ্যায় ঘটে আবার হামলার ঘটনা। এবার নগরের ৩০ নং ওয়ার্ডের গড়িয়ারপাড় এলাকায় শ্রমিকলীগ নেতা লিটন মোল্লা দলবল নিয়ে বিএনপির মিছিলে হামলা চালায়। সেখানেও কমবেশি ১১জন আহত হয়। এরপর নগরজুড়ে চরম উত্তেজনা ভর করেছে।

বরিশাল নগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদ হোসেন জানান, গণসমাবেশে জনস্রোতের ঢল নামার আলামত পেয়েই আওয়ামী লীগ তা রুখে দিতে কৌশল হিসেবেই একর পর এক অরাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কিন্তু কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে লাভ হবে না। বরং আ’লীগ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপির ঘারে দায় চাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সেক্ষেত্রে রক্তপাত বা লাশ ফেলে মহাসমাবেশের দিকে জনস্রোতের যে টান ধরেছে তা বাধা দিতেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা জনসভাস্থল নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনের সাধে গোপন বৈঠক করার পরই নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেই সোমবার থেকে শুরু করেছে পাল্টা মাঠ দখলের চেষ্টা।

নগর আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. একে এম জাহাঙ্গীর হোসেন এ অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, বিএনপি মহাসমাবেশের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। এবং নানা অভিযোগ তুলে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অরাজকতা সৃষ্টি করলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। তবে তিনি গণপরিবহন বন্ধের বিষয়ে সৃনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে বলেন, এটা যার যার সেক্টরের বিষয়।

আওয়ামী লীগের এই দায়িত্বশীল নেতার ভাষ্যনুযায়ী, আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ওয়ার্ড ভিত্তিক মিছিল অব্যাহত থাকবে। এর কারণ তুলে ধরে বলেন, ১১ নভেম্বর ঢাকায় যুবলীগের সমাবেশ সফল করতে তাদের নেতাকর্মীদের ঢাকামুখী করতেই এমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আ’লীগের এই কর্মসূচি ৫ নভেম্বরকে ঘিরেই যে নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ওয়ার্ড থেকে শুরু মিছিল মূল শহরে একত্রিত হওয়া এবং বিএনপি বিরোধী শ্লোগান দেওয়ায়। এই পরিস্থিতি যে ক্রমশই বড় ধরনের সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা মনে করছেন সুশীল সমাজও।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মঙ্গলবার বলেন, ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরে বিএনপির বড় ধরনের শোডাউনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পাল্টা এ ধরনের কর্মসূচি সংঘাত ও অস্থিরতাকে অনিবার্য করে তুলতে পারে। দুই পক্ষেরই এ জন্য পরস্পরের প্রতি সহনশীল ও সংযত হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশে অপরগতা প্রকাশ করে বলেন, গত ৩ দিন পূর্বে জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাংসদ এবং দপ্তরবিহীন মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো: সাইফুল ইসলামের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের নামে যে বৈঠক করেন, সেখানে বিএনপির গণসমাবেশে জনতার যেনো ঢল নামতে না পারে তা রোধকল্পে কী করণীয় তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। তার প্রমাণ মেট্রো পুলিশ কমিশনারের ভাষ্য ও চলমান ভূমিকায় তা প্রকাশ পেয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, সমাবেশের নামে কোন বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। আপাততদৃষ্টিতে পুলিশ প্রশাসনের অদৃশ্য আচরণ ভালোচোখে দেখছে না বিএনপি। বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন নিজেদের কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অবকাশ কোথায়? এদিকে, বিএনপি তাদের কর্মসূচির সমাবেশস্থল নিয়ে তিনটি ভেন্যুকে নির্দিষ্ট করে এক সপ্তাহ যাবতকাল অনুমতি চাইলেও জেলা প্রশাসন তা নিয়ে কালক্ষেপন করে চলছিল। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর দুপুর তিনটায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বেলস পার্ক মাঠে সমাবেশস্থলের অনুমতি দিলেও সেখানেও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিভাবে মঞ্চ সাজানো হবে। সমাবেশের একদিন পর তাদের একটি নিজস্ব একটি অনুষ্ঠান থাকায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মো: জসীম উদ্দীন হায়দার মিডিয়াকে জানান।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা মনে করছে- গণসমাবেশের আগেই আ’লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় যাতে হামলা-মামলা দিয়ে উজ্জীবিত বিএনপি দলীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা যেন বিপরীতমুখী হয়ে সমাবেশ থেকে ধমকে দাড়ায়। যদিও এখন পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপির আশংকা দু’একদিনের মধ্যেই গণগ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে ইতিমধ্যে বিএনপির মহানগর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা রাতে গাঢাকা দিয়ে থাকছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সমাবেশস্থলে যেতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞা বলে প্রতীয়মান হয় জেলার বাইরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে বরিশালে ইতিমধ্যে অবস্থান নিয়েছে। সেইসাথে শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকছে আক্রমণ থেকে পাল্টা আক্রমণ বা প্রতিহত করার প্রত্যয়। এখন শহরজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকদেরই আনাগোনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বলছে- এরকম চলমান অবস্থার মাঝে অর্থাৎ ৫ নভেম্বরের আগে বড় ধরনের সংঘাতের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সেইসাথে বিভিন্ন মহলেও তুমুল আলোচনাও চলছে ৫ নভেম্বর কী ঘটতে যাচ্ছে বরিশালে। কারণ আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও আটঘাট বেধে মাঠে নামতে চাইছে তার বিপরীতে শক্তির সমভারসাম্য তৈরিতে বিএনপিও এখন কম নয়। তাদের ভাবনা, অনুষ্ঠিতব্য অন্যান্য বিভাগীয় শহরের চেয়ে বিএনপির ঘাটি হিসেবে বরিশালে স্মরণকালে বৃহত্তর সমাবেশের মাধ্যমে ৫ নভেম্বরের কর্মসূচির সফলতা দেখিয়ে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে বুঝিয়ে দিতে চায়-এখানে ফুরিয়ে যায়নি সরকারের নিপীড়ন নির্যাতন সয়ে চলা এই দলটি। রাজনৈতিক এই পাল্টাপাল্টি ভাবনাকে সহজভাবে নিচ্ছে না স্থানীয় নগরবাসী। এখানকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে আলাপকালে যে ধারনা পাওয়া গেছে, তাতে সবার মধ্যে আশংকা, কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকায় সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে, রক্তাক্ত হতে পারে বরিশাল। ফলে গোটা বরিশালে একধরনের চাপা আতকং বিরাজ করছে।’

বরিশালের খবর

আপনার মতামত লিখুন :

 
এই বিভাগের অারও সংবাদ
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: [email protected], [email protected]
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  ধর্ষণকারী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া পুলিশের নথিতে শাকিব খানের নাম  বরিশালে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মানববন্ধন  বজ্রপাতে ৫ গরুর মৃত্যু  নিরাপত্তার অভাবে বরগুনায় কমেছে পর্যটক, বাড়ছে অপরাধ  বরগুনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে ৩ শতাধিক স্কুল  র‍্যাব মহাপরিচালক পদক পাচ্ছে কুকুর  ক্লাবে বিএনপির গোপন বৈঠক, ডিবি হেফাজতে ৫৪ নেতাকর্মী  বিয়ের নামে ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা স্কুল শিক্ষকের  ভয়ঙ্কর সড়ক, একদিনে ৩০ জনের মৃত্যু  ইমাদ পরিবহনের মালিককে আসামি করে মামলা