২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহর

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪১ অপরাহ্ণ, ০৫ অক্টোবর ২০২২

অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহর

জিয়াইল হক,বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরের নির্মিত এবং নির্মানাধীন বহুতল ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, সরকারি বেসরকারি অফিস সহ মার্কেট গুলো অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ন বলে দাবী করছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এসব স্থাপনা নির্মানে যেমন মানা হয়নি ইমারত নির্মান বিধিমালা তেমনি নেই অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা।

পৌর শহরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। নেই রিজার্ভ পানির ব্যবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে পৌর শহরের সদর রোড আবাসিক ভবন ও মার্কেটগুলো।

বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস জানায়, পৌর শহরে ছোট বড় প্রায় ২ শত ভবন রয়েছে। ৮০ ভাগ ভবনে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ভবনের নকশার মধ্যে এক তলা থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দুটি সিঁড়ি, দু’টি লিফট ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দু’টি সিঁড়ি ও দু’টি লিফট এবং দশ তলার অধিক হলে আরো বেশি পরিমাণ সিঁড়ি ও লিফট থাকার কথা থাকলেও ভবন মালিকরা কেউ এসবের তোয়াক্কা করেন না।

পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী একটি ভবনের চারপাশে ৩ মিটার পরিমাণ জায়গা খালি থাকতে হবে। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দুরত্ব ৪ থেকে ৫ মিটার। অধিকাংশ মালিক এ আইন মানছেন না। এছাড়া শহরের ভবনগুলোতে নেই রিজার্ভ পানির ট্যাংক, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও স্থায়ী অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। বহুতল ভবনগুলোতে হাইড্রেন ব্যবস্থা, লিফ্ট, বিকল্প সিঁড়ি ও জরুরি সিঁড়ি রাখা হয়নি। ভবনে আগুন লাগলে মানুষ দ্রুত নামার কোনো ব্যবস্থাও নেই। বাকেরগঞ্জ শহরে বেশ কয়েকটি পুকুর ছিল। পুকুরগুলো ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী মার্কেট ও ভবনে পানির ট্রাংকি করার বিধান থাকলেও বাকেরগঞ্জ শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনগুলোতে এর কোনো ব্যবস্থা নেই।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জুন রাত ১২টার দিকে বন্দরে আগুন লেগে তখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি রেস্টুরেন্ট, ৩টি স্বর্ণের দোকান, ৩টি ওষুধের দোকান, ডেকরেটর, টিভি-ফ্রিজের দোকানসহ প্রায় ২০টি দোকানঘর ও ১৫-২০টি বসত ঘরে পুড়ে যায়। এছাড়াও ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ বন্দরে লঞ্চ ঘাট আগুনে পুড়ে ১৬টি দোকান। আর ঐ ঘটনায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মো: আব্দুল কুদ্দুস জনকন্ঠ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শহরের সদর রোডে নির্মিত এম এন প্লাজা, খান মার্কেট, নবারুন প্লাজা,আফসার উদ্দিন মার্কেট সহ সব মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। কোন কারণে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে পুরো সদর রোড এরিয়ায় আগুন লেগে যেতে পারে। সদর রোডের দুই পাশে আবাসিক এলাকা সহ আগাবাকের লেন, টিএনটি সড়ক, বাকেরগঞ্জ বন্দর, বাস স্ট্যান্ড টু চৌমাথা মহাসড়কের পাশে আবাসিক এলাকা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকার সড়কগুলো অত্যন্ত সরু ও আঁকাবাঁকা হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভিতরে ঢোকা সম্ভব নয়। শহরে আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে প্রাইভেট ক্লিনিকের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। ক্লিনিক করার মত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই ওইসব ভবনে। অনেকগুলো ক্লিনিকেও অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

তাছাড়া আমাদের বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে যে (মই) রয়েছে তাও আবার হাইড্রোলিক নয়, ম্যানুয়াল। যা দিয়ে সর্বোচ্চ ২ তলা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা সম্ভব। ২০১৮ সালে তৃতীয় শ্রেনীর ফায়ার সার্ভিস স্থাপিত হয়। বর্তমানে ১০ জন কর্মরত রয়েছে। পানি বাহী দুটি বড় গাড়ি রয়েছে। দুটি মই রয়েছে দুই পাট বিশিষ্ট যাহা দোতলা পর্যন্ত উঠা সম্ভব। টু হুইলার মরটসাইকেল রয়েছে তাও অকেজো। বাকেরগঞ্জ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা দিন দিন বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট অবস্থিত অতি দ্রুত বাকেরগঞ্জে একটি প্রথম শ্রেণীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তাই বাকেরগঞ্জ অগ্নি দুর্ঘটনা হলে সে ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তাকিয়ে থেকে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন