২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

অনিয়ম-দুর্নীতি/ জনরোষ এড়াতে পুলিশের গাড়িতে রাঙাবালী ছাড়লেন ইউএনও

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৫৪ অপরাহ্ণ, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

অনিয়ম-দুর্নীতি/ জনরোষ এড়াতে পুলিশের গাড়িতে রাঙাবালী ছাড়লেন ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: রাঙ্গাবালী ছাড়লেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান। যদিও তার বিদায় পর্ব মধুর ছিল না।

আনুষ্ঠানিক বিদায় তো দূরের কথা, পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে পুলিশের টহল গাড়ি চেপে তাকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হয়েছে।

এই উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তার দুর্নীতির বিষয়ে এরইমধ্যে ঢাকায় চিঠি দিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাগর পাড়ের বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালীতে ইউএনও হিসাবে যোগ দেন মাশফাকুর। এর পরপরই তার বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।

নিজ দপ্তরের কর্মচারীকে মারধর, মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, ঘর দেওয়ার নাম করে ঘুস গ্রহণ এবং হাট-বাজার ইজারার বিপরীতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ এক ঠিকাদারকে জিম্মি করে কোটি টাকা ঘুস দাবির অডিও ভাইরাল হলে বিপাকে পড়েন মাশফাক।

এসব ঘটনায় দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ এবং সংবাদ প্রকাশ হলে অনুসন্ধানে একাধিক কমিটি করে জেলা প্রশাসন।

তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে লিখিতভাবে জানানো হয় ঢাকায়।

এরই মধ্যে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউএনও মাশফাকুরকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদোন্নতি দিয়ে শরীয়তপুরে বদলির আদেশ আসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।

যদিও সেই আদেশ কার্যকর হয়নি। মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ না করেই অর্থ উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের কারণে তখন তাকে ছাড়পত্র দেয়নি জেলা প্রশাসন।

ফলে পদোন্নতিসহ বদলি আদেশ হলেও অতিরিক্ত প্রায় এক বছর রাঙ্গাবালীতেই থাকতে হয় তাকে।

চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর আসা নতুন আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি বিভাগে ন্যস্ত করা হয় তাকে। এরপরও রাঙ্গাবালী ছাড়তে অপেক্ষা করতে হয় আরও ২ মাস।

ছাড়পত্র পাওয়ার পর শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টায় রাঙ্গাবালী থানা পুলিশের একটি টহল গাড়িতে চেপে আগুনমুখা নদীর কোড়ালিয়া প্রান্তে স্পিডবোট ঘাটে যান মাশফাকুর। নদী পাড়ি দিয়ে গলাচিপা হয়ে রওয়ানা হন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের দাবি, ঘুস বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত না দেওয়ায় জনরোষে পড়তে পারেন এজন্য গাড়িতে চেপে রাঙ্গাবালী ছেড়েছেন ইউএনও।

যদিও বিষয়টি স্বীকার করেননি সেখানকার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের একমাত্র গাড়িটি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ইউএনও সাহেবকে নদীর ঘাটে পৌঁছে দিয়েছি। এখানে পুলিশ প্রহরার কোনো বিষয় ছিল না।’

উপজেলার বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া বলেন, ‘মুজিববর্ষের ২শ ঘর নির্মাণের কাজ দেবেন বলে জামানত বাবদ ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মাশফাকুর।

কাজ করলেও বরাদ্দ অনুযায়ী টাকা দেননি। জামানতের টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এখন তো তিনি টাকা না দিয়েই চলে গেলেন।’

একই ইউনিয়নের বাসীন্দা শুক্কুর মৃধা বলেন, ‘মুজিববর্ষের ঘর পেতে বিভিন্ন দুস্থ পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসানাতের মাধ্যমে ইউএনওকে দিয়েছি। কিন্তু উনি (মাশফাক) ঘর দেননি।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাহেরচরের খাস জমিতে আমার একটি দোকান রয়েছে।

ওই দোকানের বিপরীতে লিজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ১ লাখ নিয়েছেন ইউএনও। কিন্তু দেননি। যাওয়ার আগে বহুবার টাকা ফেরত চাইলেও না দিয়েই চলে গেছেন।’

চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হানিফের ছেলে রিপন মিয়া বলেন, ‘মুজিববর্ষের ঘর দেওয়ার কথা বলে ইউএনও ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। ঘর কিংবা টাকা কোনোটাই পাইনি। টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিতেন।

’ রাঙ্গাবালীর উপজেলা চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল চালক হিরন মিয়া বলেন, ‘মুজিববর্ষের ঘর দেওয়ার কথা বলে ইউএনও ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা নিয়েছেন।

ঘর টাকা কোনোটাই দেননি। চলে যাওয়ার আগে টাকা চাইলে পরিষদের নাজির মিরজুল টাকা দেবে বলে গেছেন।’ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নজির মিরাজুল বলেন, ‘হিরনের সঙ্গে ইউএনও সাহেবের লেনদেন ছিল জানি।

তবে আমাকে কোনোরকম টাকা দেওয়ার কথা বলেননি তিনি। তাছাড়া আমি টাকা দেব কোথা থেকে?’ এছাড়া রাঙ্গাবালীর আরও অনেকে ইউএনওর কাছে ঘুস বাবদ দেওয়া টাকা পাবেন বলে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিদায় নেওয়া ইউএনও মাশফাকুর রহমান বলেন, এতদিন পর তারা কেন এসব বলছেন? প্রায় ৪ বছর রাঙ্গাবালী ছিলাম, তখন কেন বলেনি? তারা লিখিতভাবে দরখাস্ত দিক।

টাকা দেওয়ার বিষয়টি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে ঘর বাবদ মানুষের কাছ থেকে টাকা আনাও তো অপরাধ। তাহলে তো তারাও অপরাধ করেছেন।

তাদের এসব মিথ্যা গল্পে যদি ইউএনওর ক্ষতি হয় তাহলে তিনি কি মামলা করতে পারবেন না? তারা যা বলছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন