২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেড়েছে ওয়াকিটকির ব্যবহার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:১৩ অপরাহ্ণ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেড়েছে ওয়াকিটকির ব্যবহার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেড়েছে ওয়াকিটকির ব্যবহার। ওয়াকিটকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে লোকজনকে তুলে নিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি, মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব অপরাধে জড়িতরা মূলত ওয়াকিটকি ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সরকারি সংস্থার লোকজন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য এ যন্ত্র ব্যবহার করেন।

কিন্তু অপরাধীরা অহরহ সংবেদনশীল যন্ত্রটিসহ ধরা পড়ছে। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তিকে ওয়াকিটকি ব্যবহারের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানকে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। সরকারি সংস্থার বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে ওয়াকিটকি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। আর কালো রঙের ওয়াকিটকি কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ব্যবহার করতে পারেন। পণ্যটির অপব্যবহার বন্ধের দায়িত্ব পুলিশের।

পুলিশের একটি তদন্ত সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তারা নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা দাবি করে আর সাজসজ্জা দেখে প্রথমে আসল না নকল তা বোঝা যায় না। যখন বুঝতে পারেন তখন আর কিছুই করার থাকে না। প্রায়ই অবৈধ ওয়াকিটকিসহ গ্রেফতার হচ্ছে এমন অপরাধীরা।

সম্প্রতি রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে তার সর্বস্ব ছিনতাই করা হয়। আলোচিত এ ঘটনায় ঘটনার হোতা শাকিল আহম্মেদ রুবেল ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের কাছ থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি, পিস্তলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। ছিনতাইয়ের সময় রুবেলের হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগানো থাকত।

যে কেউ তাকে প্রথম দেখাতেই ভেবে নিতেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এভাবে সে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করে আসছিল। ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ি ও পূর্বাচল এলাকায় নির্জন স্থানে মেয়েদের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়ত সে। গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, সে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে এক হাজার ৫০০-এর বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে, যাতে তারা লোকলজ্জার ভয়ে কোনো অভিযোগ না করে। ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে একজন সাবেক পুলিশ কনস্টেবল রয়েছেন।

তাদের কাছ থেকে ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল। একশ্রেণির মুনাফালোভী অপরাধীদের হাতে তুলে দিচ্ছে অবৈধ ওয়াকিটকি। অথচ কালো রঙের ওয়াকিটকি বিপণন ও ব্যবহার অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিটিআরসির পক্ষ থেকে।

২২ মে র‌্যাব-৩ এর একটি দল মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল সাব্বির ও আল মামুন নামে দুজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করে। র‌্যাব জানায়, এ চক্রটি অনলাইনে ওয়াকিটকি বিক্রি করে আসছিল অন্তত দুই বছর ধরে। এসব ওয়াকিটকি পৌঁছে যেত অপরাধীদের হাতে। এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এছাড়া ৫ জুন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকা হতে ১০টি কালো রঙের ওয়াকিটকি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১০ এর একটি দল। র‌্যাব-১০ এর এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট অপরাধীদের কাছে বিক্রির কথা স্বীকার করে। এ ছাড়া ১৮ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বিটিআরসির এনফোর্সমেন্ট টিম ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট থেকে বিপুল পরিমাণ অনুমোদনহীন জ্যামার, বুস্টার ও রিপিটারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ দল ১৭টি চালানে প্রায় এক হাজার ওয়াকিটকি জব্দ করেন। এখন পর্যন্ত এসব ওয়াকিটকির মালিকানা দাবি করেননি কেউ। তবে যে ঠিকানা ব্যবহার করে সেটগুলো বিমানবন্দরে এসেছিল সেই নাম-ঠিকানাও ভুয়া।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ওয়াকিটকির মতো স্পর্শকাতর প্রযুক্তি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ প্রযুক্তি অপরাধীরা ব্যবহার করলে তা হবে দেশ ও জনগণের জন্য উদ্বেগের। অবৈধ পথে যেসব ওয়াকিটকি আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ অভিযান অব্যাহত আছে। যারা ওয়াকিটকি ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করছে, তাদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অপরাধীকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন